উইকিঅভিধান:বাংলা ব্যাকরণ/পদ

উইকিঅভিধান, মুক্ত অভিধান থেকে

বিশেষ্য পদ[সম্পাদনা]

যে পদে কোন কিছুর নাম বোঝায় তা-ই বিশেষ্য বা নাম পদ।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

কীসের নাম বোঝায়, এই ভিত্তিতে বিশেষ্যকে কয়েকটি শ্রেণীতে ভাগ করা যায়।

  • সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে কোন বিশেষ ব্যক্তি, স্থান, দেশ, নদী, পর্বত ইত্যাদির নাম বোঝায় তাকে সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: নজরুল, পদ্মা, ঢাকা, শৈলকুপা ইত্যাদি।
  • জাতিবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে কোন প্রাণী, মানুষ প্রভৃতির সাধারণ নাম বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বা সামান্যবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: ইংরেজ, গরু, পাখি, মানুষ, পশু ইত্যাদি।
  • বস্তুবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য দ্বারা কোন বস্তুর বা পদার্থের নাম বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বা পদার্থবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: জুতো, কাঠ, রসগোল্লা, বাতাস ইত্যাদি।
  • সংখ্যা বা পরিমাণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে সংখ্যা অথবা পরিমাণ বোঝায় তা-ই সংখ্যাবাচক বিশেষ্য বা পরিমাণবাচক বিশেষ্য। যেমন: উনিশ, মিটার, কিলোগ্রাম, ঘণ্টা, ডজন ইত্যাদি।
  • গুণবাচক বিশেষ্য: যে বিশেষ্য পদে গুণ, দোষ, ইত্যাদির ভাব বোঝায় তা-ই গুণবাচক বিশেষ্য।যেমন: সাহস, পাপ, পুণ্য, ক্ষমা ইত্যাদি।
  • সমষ্টিবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য শব্দে কোন কিছুর সমষ্টি বোঝায় তা-ই সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যেমন: শ্রেণী, গুচ্ছ, ঝাঁক, জনতা ইত্যাদি।
  • অবস্থাবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য পদে কোন অবস্থার নাম বোঝায় তাকে অবস্থাবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সুখ, পরাধীনতা, স্বাধীনতা, স্বাচ্ছন্দ্য ইত্যাদি।
  • ভাববাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য পদে মনোগত কিংবা অবস্থাগত ভাব বোঝায় তাকে ভাববাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: সুখ, আনন্দ, দুঃখ, গুরুত্ব, উন্মাদনা ইত্যাদি।
  • ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য : যে বিশেষ্য দ্বারা কোন কাজের নাম বোঝায়, তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে। যেমন: যাওয়া, খাওয়া, দেখা, লাগানো ইত্যাদি।

বিশেষণ পদ[সম্পাদনা]

বাক্যের অন্তর্গত কোন পদের গুণ, পরিমাণ, অবস্থা, সংখ্যা, ধর্ম ইত্যাদি বোঝানোর জন্য যে পদ ব্যবহৃত হয়, তাকে বিশেষণ পদ বলে। যেমন: সুন্দরী তরুণী, ভালো ছেলে। ‘সুন্দরী তরুণী’ বললে সব তরুণীকে না বুঝিয়ে শুধুসুন্দরীদের বোঝানো হয়েছে। তেমনি, ‘ভালো ছেলে’ বললে সব ছেলেকে বোঝানো হয় না, শুধু‘ভালো’ ছেলেদের বোঝানো হয়েছে।

সংজ্ঞা[সম্পাদনা]

যে পদ অন্য কোন পদকে বিশেষিত করে অর্থাৎ অন্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ ইত্যাদি প্রকাশ করে, তাকে বিশেষণ পদ বলে।

প্রকারভেদ[সম্পাদনা]

বাক্যের মধ্যে কোথায় রয়েছে, কোন শ্রেণীর পদকে বিশেষিত করছে, বিশেষণ পদটি কীভাবে গঠিত হচ্ছে, এ সব দিক বিবেচনা করে বিশেষণের বেশ কয়েকটি শ্রেণী বিভাগ করা যায়।

বাক্যের অবস্থা অনুযায়ী শ্রেণী বিভাগ[সম্পাদনা]

  1. সাক্ষাৎ বিশেষণ : যে বিশেষণ বিশেষিত পদের আগে বসে তাকে সাক্ষাৎ বিশেষণ বলে। যেমন: হালকা মেঘ, অপূর্ব দৃশ্য, তাড়াতাড়ি এসো ইত্যাদি। এখানে হালকা, অপূর্ব, তাড়াতাড়ি সাক্ষাৎ বিশেষণ।
  2. বিধেয় বিশেষণ : কোন বিশেষণ বাক্যের বিধেয় অংশ হলে তাকে বিধেয় বিশেষণ বলে। নাম বিশেষণই সাধারণত এই শ্রেণীর বিশেষণ হয়। যেমন: শিমুর মাথার চুল খুব লম্বা। ডলি অসুস্থ। সমুদ্রের পানি নীল। এখানে, লম্বা, অসুস্থ, নীল বিধেয় বিশেষণ।

কোন শ্রেণীর পদকে বিশেষিত করছে এই অনুসারে[সম্পাদনা]

  1. বিশেষ্যের বিশেষণ: যে বিশেষণ কোন বিশেষ্য অথবা সর্বনাম পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ, বর্ণ ইত্যাদি বোঝায় তাকে নাম বিশেষণ বলে। এর দুটো শ্রেণী হতে পারে। বিশেষ্য বা নামপদের বিশেষণ হলে বিশেষ্যের বিশেষণ; আর সর্বনামের বিশেষণ হলে সর্বনামের বিশেষণ। তবে এরা আলাদা কোন বিশেষণ নয়, একই বিশেষণ সর্বনাম কিংবা বিশেষ্যের জন্য প্রয়োগ করা যেতে পারে। উদাহরণে বিষয়টি দেখানো হলো। বিশেষ্যের বিশেষণ: বিরাট বাড়ি, বুদ্ধিমতী মেয়ে। সর্বনামের বিশেষণ : তুমি সত্যবাদী, সে বিদ্বান।
  2. বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণ অন্য কোন বিশেষণ পদকে বিশেষিত করে অর্থাৎ এদের দোষ, গুণ, অবস্থা ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। শিক্ষার্থী বন্ধুরা এখানে মনে রাখা প্রয়োজন যে নাম বিশেষণ কিংবা ক্রিয়া বিশেষণ: এই দুই রকম বিশেষণই বিশেষণের বিশেষণ হতে পারে। যেমন, খুব ভাল মেয়ে। ভারি চমৎকার ছবি। খুবই আস্তে কথা বলেন তিনি। এখানে: খুব, ভারি, খুবই বিশেষণের বিশেষণ।
  3. ক্রিয়ার বিশেষণ বা ক্রিয়া বিশেষণ: যে পদে বাক্যের ক্রিয়াপদটির গুণ, প্রকৃতি, তীব্রতা, ইত্যাদি প্রকৃতিগত অবস্থা বোঝায় তাকে ক্রিয়াবিশেষণ বলে। তাড়াতাড়ি যাও। সহাস্যে বললেন। আস্তে বল। এই তিনটি বাক্যে ‘তাড়াতাড়ি’ ‘সহাস্যে’ ‘আস্তে’ এই তিনটি পদ যাও, বললেন ও বলা ক্রিয়াকে বিশেষণ করছে। অর্থ ও রূপ অনুযায়ী ক্রিয়া বিশেষণকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়।
    • অর্থ অনুযায়ী ভাগ
      1. কালবাচক : ‘সদা থাকো আনন্দে’। (রবীন্দ্রনাথ)
      2. স্থানবাচক : কোথায় পাব তারে।
      3. প্রকৃতিবাচক : সহাস্যে বললেন; দারুণ লাগছে।
    • রূপগত ভাগ
      1. বিভক্তিহীন : বৃষ্টিপড়ে টাপুর-টুপুর।
      2. বিভক্তিযুক্ত : সাবধানে থেকো।
      3. প্রত্যয়যুক্ত : কার্যত দেখা গেল।
      4. অসমাপিকা ক্রিয়া : গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে। (অতুল প্রসাদ)
      5. দ্বিরুক্তশব্দ : ঝরঝর ঝরছে।
  4. অব্যয়ের বিশেষণ : অব্যয় পদের বিশেষণকে অব্যয়ের বিশেষণ বলা হয় । যেমন, ঠিক সামনে নজর রাখো; অতি অকস্মাৎই ঘটনাটা ঘটলো।