আলাপ:কাঁই
আলোচনা যোগ করুনকাঁই পরিভাষার বিবরণ
[সম্পাদনা]৭৮. সৃষ্টিকর্তা Creator (ক্রীএটর)/ খালিক্ব (خَالِقٌ)
ভূমিকা (Prolegomenon) এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘পৌরাণিক প্রকৃত মূলক সত্তা’ বিশেষ। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক সহযোগী মূলক সত্তা’ ‘স্রষ্টা ও মধুচন্দ্রিমা’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু ও শস্য’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘আদিত্য, কালা, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা’ ও মাধব১’। এবং এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘আদি১, নীর, সূর্য, স্বায়ম্ভূ ও হর’। এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক প্রধান মূলক সত্তা’।
প্রাথমিক পরিপত্র (Primary circular) সৃষ্টিকর্তার আভিধানিক, উপমান, চারিত্রিক ও ছদ্মনাম পরিভাষা।
বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা; সৃষ্টিকর্তা।
বাংলা আভিধানিক প্রতিশব্দ; জগৎকারণ, জগৎস্রষ্টা, পরব্রহ্ম, পরমঈশ্বর, পরমব্রহ্ম, পরমেশ্বর, বিরিঞ্চি, বিধাতা, ব্রহ্ম, ব্রহ্মা ও সৃজক।
বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান; কাঁই, ঘি, জল৫, পীযূষ, মধু১ ও শস্য। বাংভারতীয় পৌরাণিক চারিত্রিক; অঞ্জন, অসিত, আদিত্য, কাজল, কাজলা, কালা, কালাচাঁদ, কালু, কাহ্ন, কৃষ্ণ, কেশব, কেষ্ট, গোপাল, তপন, দিনেশ, পূষা, পৃথি, বাসুদেব, বিবস্বান, বিশ্বদেব, বৈবস্বত, ব্রজেশ্বর, ব্রহ্মা, ভাস্কর, মাধব১, মিত্র, রবি, শৌরি, শ্যাম, শ্যামচাঁদ, শ্যামরায়, শ্যামল, শ্যামসুন্দর, সাত্ত্বিক ও সুরুজ।
বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম; অগ্নি, অচ্যুত, অজ, অন্তর্যামী, অযোনিজ, অযোনিসম্ভব, অযোনিসম্ভূত, অরণ্যবিহারী, অরুণসারথি, অর্ক, অসিত, অসিতদেবল, আত্মারামেশ্বর, আদি১, আদিত্য, কংসজিৎ, কংসহা, কংসারি, কজ্জল, কমলজ, কমলযোনি, কাঁইজি, কানাই২, কানু, কাল৪, কালশশী, কালা১, কালিনীজাত, কালিয়দমন, কালিয়া, কালোঈশ্বর, কালোজাম, কালোভ্রমর, কিরণমালী, কুসুমাসব, কৃষ্ণাত্মা, কেলে, কেলেমাণিক, কেলেসোনা, খমণি, খরকর, খরাংশু, গোপবল্লভ, গোপিজনবল্লভ, গোপিনীবল্লভ, গোবর্ধনধারী, গ্রহপতি, ঘনশ্যাম, ঘৃত, চতুরানন, চতুর্মুখ, চিকনকালা, চিদানন্দ, জগতি, জ্যোতি, তিগ্নরশ্মি, তিগ্মকর, তিগ্মাংশু, তেজোমূর্তি, তেজোরূপ, ত্রিভঙ্গমুরারি, ত্বিষাপতি, দামোদর, দারকাপতি, দিনকর, দিননাথ, দিনপতি, দিনমণি, দিবাকর, দিবাবসু, দিবামণি, দেবকিনন্দন, দ্যুমণি, দ্বারকেশ, দ্বারিকানাথ, দ্বারিকাপতি, ধাতা, ধাতৃ, ধূমল, ধ্বান্তারি, নটবর, নটর, ননিচোরা, নন্দদুলাল, নন্দনন্দন, নন্দলাল, নভশ্চক্ষ, নভশ্চক্ষু, নভোমণি, নাড়ুগোপাল, নীর, নীলকান্তমণি, নীলমণি, পদ্মনাথ, পদ্মবন্ধু, পদ্মযোনি, পদ্মিনিকান্ত, পদ্মিনিবল্লভ, পরমেশ, পাণ্ডবসখা, পাবক, পার্থসারথি, পিতামহ, পুণ্ডরীকাক্ষ, পুরাণপুরুষ, পুরুষাদ্য, পুষা, পুষ্পনির্যাস, পুষ্পরস, পুষ্পসার, পুষ্পাসব, পূর্ণব্রহ্ম, পূষণ, পৃথু, পৌষ্য, প্রজাপতি, প্রত্যাদেষ্টা, প্রথম, প্রভাকর, প্রাণকৃষ্ণ, বঙ্কিমবিহারী, বনমালী, বনয়ারি, বনোয়ারি, বন্ধুকবন্ধু, বলানুজ, বহ্নিভোগ্য, বালকৃষ্ণ, বালগোপাল, বালার্ক, বিকর্তন, বিক্রমাদিত্য, বিপিনবিহারী, বিভাকর, বিভু, ব্রজকিশোর, ব্রজদুলাল, ব্রজমোহন, ব্রজসুন্দর, ব্রহ্মণস্পতি, ব্রহ্মর্ষি, ব্রাহ্মণ, ভানু, ভানুমান, ভূমা, মউ, মকরন্দ, মধুরস, ময়ূখমালী, মরীচিমালী, মহাপ্রভু, মুরলিধর, মুরারী, মেধো, মৌ, যদুকুলপতি, যদুনাথ, যদুপতি, রসরাজ, রাখালরাজা, রাধাকান্ত, রাধানাথ, রাধাবল্লভ, রাধামাধব, রাধারমণ, রাধিকারঞ্জন, রাধিকারমণ, রাসবিহারী, লোকেশ, শকটারি, শন, শষ্পশ্যাম, শামর, শামলা, শ্যামকণ্ঠ, শ্যামাঙ্গ, শ্রীকৃষ্ণ, সবিতা, সর্বশক্তিমান, সর্বান্তর্যামী, সহস্রকর, সহস্রাংশু, সাম, সীতিমা, সুতপা, সুরজ, সূর্য, সূর্য্য, স্বজাত, স্বয়ম্ভু, স্বায়ম্ভূ, স্রষ্টা, হংসবাহন, হংসরথ, হংসরূঢ়, হর, হরিদশ্ব, হিরণ্ময়, হিরণ্যগর্ভ, হিরণ্যপাণি, হীরক ও হীরা।
সৃষ্টিকর্তার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন (Short report of the 'Creator') মূলক উপমান চারিত্রিক ছদ্মনাম সৃষ্টিকর্তা কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু১ ও শস্য আদিত্য, কালা, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা ও মাধব১ আদি১, নীর, সূর্য, স্বায়ম্ভূ ও হর বাংলা, ইংরেজি ও আরবি (Bengali, English and Arabic) বাংলা ইংরেজি আরবি ৭৮. সৃষ্টিকর্তা Creator (ক্রীএটর) খালিক্ব (خَالِقٌ) ৭৮/০১. স্রষ্টা Maker (মেকার) সানিউ (صَانِعٌ) ৭৮/০২. মধুচন্দ্রিমা Honeymoon (হানিমুন) শাহরু আলয়াসালি (شَهْرُ الْعَسَلِ) ৭৮/০১. কাঁই Lord (লোর্ড) আল্লাহ (الله) ৭৮/০২. ঘি Butter (বাটার) সামন (سَمْنٌ) ৭৮/০৩. পীযূষ Elixir (ইলিক্সার) ইকসীর (إِكْسِيْرُ) ৭৮/০৪. মধু Honey (হানি) আসাল (عَسَلٌ) ৭৮/০৫. শস্য Grain (গ্রেইন) হাব্বাহ (حَبَّةٌ) ৭৮/০৬. আদিত্য Apollo (অ্যাপোলো) শামস (شَمْسٌ) ৭৮/০৭. কালা Blackish (ব্ল্যাকিশ) মাসূদ (مَسْوْدٌ) ৭৮/০৮. কৃষ্ণ Christo (খ্রিস্টো) ঈসা (عِيسَى) ৭৮/০৯. ব্রহ্মা Jehovah (যেহৌভা) ইয়াহওয়াহ (يَهْوَهُ) ৭৮/১০. মাধব১ Honeyed (হানিড) মুয়াচ্ছিল (مُعَسِّلُ) ৭৮/১১. আদি Embryonic (এ্যাম্ব্রাওনিক) জানীনীউ (جَنِيْنِيٌّ) ৭৮/১২. নীর Aqua (অ্যাকোয়া) সায়িল (سَائِلٌ) ৭৮/১৩. সূর্য Sun (সান) শামস (شَمْسٌ) ৭৮/১৪. স্বায়ম্ভূ Autogenous (অটোজেনাস) মুসাব্বিব (مُسَبِّبٌ) ৭৮/১৫. হর Pirate (পাইরেট) কুরসান (قُرْصَانٌ)
সৃষ্টিকর্তা (বাপৌরূ)বি নির্মাতা, পিতা, জনক, Creator (ক্রীএটর); খালিক্ব (خَالِقٌ); (পরি) মানবদেহে প্রাপ্ত কালোবর্ণের মধুবৎ মিষ্ট অমৃতসুধা (শ্ববি) ঈশ্বর, অনন্ত, বিধাতা, স্বায়ম্ভূ; (বাদৈ) কালা, কালিয়া, কৃষ্ণ, বিরিঞ্চি, ব্রহ্মা, শ্যাম (ইংপ) melanin, Lord, maker, designer (ইপৌচা) ‘ميلانين’ (মিলেনিন), ‘আ.ﺍﻠﻠﻪ’ (আল্লাহ), ‘আ.ﻋﻴﺴﻰٰ’ (ইসা), ‘আ.ﻤﺴﻴﺢ’ (মসিহ), ‘আ.ﺷﺄﻢ’ (শাম), ‘আ.ﺸﻤﺲ’ (শামস), ‘আ.ﺸﻴﺶ’ (শিশ) (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবার প্রধান বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; সারা জগতের সৃষ্টিকারীকে বাংলায় ‘সৃষ্টিকর্তা’ বলা হয় ২. শ্বরবিজ্ঞানে সৃষ্টিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ গ্রহণকারীকে রূপকভাবে ‘সৃষ্টিকর্তা’ বলা হয়; (বাপৌছ) আদি, সূর্য, স্বায়ম্ভূ, স্রষ্টা ও হর এবং নীর; (বাপৌচা) অসিত, কালা, কালু, কৃষ্ণ ও ব্রহ্মা; (বাপৌউ) কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু ও শস্য; (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা; {সং. সৃষ্টি + সং. কর্তা} সৃষ্টিকর্তার সংজ্ঞা (Definition of Creator) শ্বরবিজ্ঞানে সারাজগতের সৃষ্টিকারীকে সৃষ্টিকর্তা বলে। সৃষ্টিকর্তার মরমী সংজ্ঞা (Mystical definition of Creator) শ্বরবিজ্ঞানে সৃষ্টিক্রিয়ার সরাসরি অংশগ্রহণকারী সত্তাকে সৃষ্টিকর্তা বলে। সৃষ্টিকর্তার গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some important quotations of Creator) ১. “আরবিরা যারে আল্লাহ কয়, সংস্কৃতিতে সে ব্রহ্মা হয়, সবাই কাঁই- ডাকি বাংলায়, বলন কয় সৃষ্টিকর্তা ভুলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৫)। ২. “মুসলমানদের দর্শনবিধি, আত্মা স্রষ্টার প্রতিনিধি, আত্মা হয় পাপী যদি, সৃষ্টিকর্তাই পাপী হয়।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১৮৩)। ৩. “জাত বলে সবাই মুচি, একজলে সবার সুচি, বিজাতি বলে কেন অরুচি, সৃষ্টিকর্তা একজনা।” (বলন তত্ত্বাবলী- ১১৯)। ৪. “নগরকর্তা হলে শাসন, পালনকর্তার হয় দর্শন, পেরিয়ে সে জন্মমরণ, সৃষ্টিকর্তা দেখে নিবি।” (বলন তত্ত্বাবলী- ৬১)। ৫. “সব সৃষ্টি করল যেজন, বলো তার সৃষ্টি কে করেছে, সৃষ্টি ছাড়াই কী সৃষ্টিকর্তা নাম ধরেছে।” (পবিত্র লালন- ৯১৪/১)। ৬. “সৃষ্টিকর্তা বলছ যারে, সে অংশীহীন হয় কেমন করে, ভেবে দেখ পূর্বাপরে, সৃষ্টি করলেই তার অংশী আছে।” (পবিত্র লালন- ৯১৪/২)। ৭. “সৃষ্টিকর্তা সৃষ্টি করলেন সবারি, যুগে যুগে মাতা হয় যোগেশ্বরী, সুযোগ না বুঝে- কুযোগে মজে, মারা গেল জীব ঘোর তুফানে।” (পবিত্র লালন- ৭০৮/২)। ৮. “الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ(১)” উচ্চারণ; ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বি আলয়ালামিন’ অর্থ; প্রশংসা কাঁইয়ের জন্য যিনি সারা জগতের পালনকর্তা” (কুরয়ান, ফাতিহা- ১)। ৯. “ إِنَّ رَبَّكُمْ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ مَا مِنْ شَفِيعٍ إِلَّا مِنْ بَعْدِ إِذْنِهِ ذَلِكُمْ اللَّهُ رَبُّكُمْ فَاعْبُدُوهُ أَفَلَا تَذَكَّرُونَ” (কুরআন- ইউনুছ- ৩)। উচ্চারণ; ‘ইন্না রাব্বিকুম আল্লাহু আল্লাজি খালাক্বা আসসামাওয়াতি ওয়ালয়ারদি ফি সিত্তাতা আইয়ামি। সুম্মা আসতাওয়া আলা আলয়ারসি। ইউদাব্বিরু আলয়ামরা মা মিন শাফিয়ি ইল্লা মিন বাদি ইজনাহু যালিকুম আল্লাহু রাব্বিকুম। ফাবুদুহু আফালা তাজাক্কারুন’ (কুরআন- ইউনুছ- ৩)। অর্থ; “সত্যই তোমাদের প্রতিপালক সেই কাঁই, যিনি ছয় দিনে আকাশ ও ভূমি সৃজন করেছেন তদন্তর কার্যনির্বাহ করতে সিংহাসনে উপবিষ্ট হয়েছেন, তার আদেশ ব্যতীত কোনো অনুরোধকারীই নাই। ইনিই তোমাদের প্রতিপালক কাঁই। অতএব; তোমরা তাঁকেই অর্চনা কর। তোমরা কী উপদেশ গ্রহণ করছ না” (কুরআন- ইউনুছ- ৩)। ১০. “ وَهُوَ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَلَئِنْ قُلْتَ إِنَّكُمْ مَبْعُوثُونَ مِنْ بَعْدِ الْمَوْتِ لَيَقُولَنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا إِنْ هَذَا إِلَّا سِحْرٌ مُبِينٌ” (কুরআন, সুরা হুদ- ৭)। উচ্চারণ; ওয়া হুয়া আল্লাজি খালাক্বা আসসামাওয়াতি ওয়ালয়ারদি ফি সিত্তাতা আইয়ামি। ওয়া কানা আরশুহু আলা আলমায়ি। লিইয়াবলুওয়াকুম আইয়াকুম আহসানু আমালা, ওয়ালায়িন কুলতা ইন্নাকুম মাবউসুনা মিন বাদি আলমাওতি। লাইয়াকুলান্না আল্লাজিনা কাফারু ইন হাজা ইল্লা সিহরু মুবিন।” (কুরআন, সুরা হুদ- ৭)। অর্থ; “তিনিই যিনি আকাশ ও ভূমি ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন। তখন তার সিংহাসন ছিল জলের ওপর। কার্যত তোমাদের মধ্যে কে অত্যুত্তম এটা পরীক্ষা করার জন্য। যদি তুমি বল যে “নিশ্চয় তোমরা মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত হবে। তবে; অবশ্যই বলবে যারা ধর্মদ্রোহী, এটা স্পষ্ট যাদু ভিন্ন কিছুই নহে” (কুরআন, সুরা হুদ- ৭)। সৃষ্টিকর্তার পরিচয় (Identity of Creator) এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা’ বিশেষ। জীব সৃষ্টিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণকারীকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়। বর্তমানে সৃষ্টিকর্তার অনেক নাম শুনতে পাওয়া যায়। যথা; ১. ঈশ্বর ২. ওয়াহিগুরু ৩. কাঁই ৪. ব্রহ্মা ৫. স্রষ্টা ৬. Lord (লোর্ড) ৭. Jehovah (জোভ) ৮. Chúa tể (চো তে) ৯. Here (হিরিই) ১০. Tanrı (তানরি) ১১. Chúa tể (চো তে) ১২. ‘الله’ (আল্লাহ) ১৩. ‘خدا’ (খোদা) ১৪. ‘خداوند’ (খোদাওন্দ) ১৫. 老爺 (লাংইয়ে) ১৬. 범천 (হামসান) ১৭. 主 (চু) ও ১৮. ロード (এয়াদা)। ইত্যাদি। এগুলো সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক পৌরাণিক সৃষ্টিকর্তা। এদের নির্মাণশৈলী সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন। এগুলো পুরাণ শিল্প দ্বারা প্রস্তুত সৃষ্টিকর্তা। অর্থাৎ; এগুলোকে বলা যায় কল্পিত সৃষ্টিকর্তা/ Mythological creator বা সৃষ্টিকর্তার কল্পিত চরিত্র/ Mythological character of Creator. কল্পিত সৃষ্টিকর্তা ও বাস্তব সৃষ্টিকর্তা কখনও এক নয়। অথচ বড় অবাক হবার বিষয় হলো; সারা বিশ্বের সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মনীষী, বক্তা, ব্যৈখ্যিক, টৈকিক, অভিধানবিদ ও অনুবাদকরা মরমীবাদে বর্ণিত কল্পিত সৃষ্টিকর্তাকেই বাস্তব সৃষ্টিকর্তা রূপে বুঝে ও বুঝিয়ে থাকেন। এজন্য; সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদের অনুসারীরা কখনই মরমীদের সৃষ্টিকর্তার সন্ধানলাভ করতে পারেন না। উল্লেখ্য যে আত্মদর্শন দুই প্রকার। যথা; ১. বাস্তব আত্মদর্শন Real theosophy ও ২. প্রতীকী আত্মদর্শন Symbolic theosophy. ধর্মগ্রন্থাদি বাস্তব আত্মদর্শন কিন্তু সাম্প্রদায়িক সংস্কারগুলো প্রতীকী আত্মদর্শন। যেমন; হিন্দুদের গঙ্গায় স্নান করে পাপ মোচন ও মুসলমানদের কালোপাথরে চুমা দিয়ে পাপ মোচন ও পুণ্য অর্জন ইত্যাদি। একটি বাস্তব গঙ্গাস্নান রয়েছে; যার পবিত্র জল পান করলে সত্যসত্যই পাপ মোচন হয়। তেমনই; একটি বাস্তব পাথরও রয়েছে; যাতে কৌশল করে চুমা দিলে সত্যসত্যই পাপ মোচন ও পুণ্য অর্জিত হয়। কিন্তু যেমন; সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের গঙ্গা প্রতীকী; তেমনই; সাম্প্রদায়িক মুসলমানদের পাথরও প্রতীকী। তেমনই; সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা যে প্রকৃত স্রষ্টা নয়; এটা সাম্প্রদায়িকরা একবারও ভেবে দেখেন না। এ ব্যাপারে মহাত্মা লালন সাঁইজির একটি বাণী উপস্থাপন করা যায়; “চন্দ্র সূর্য যে গঠেছে, তার খবর কে করেছে, শুনি নীরেতে নিরঞ্জন আছে, তবে নীরের জন্ম কে দিয়েছে।” (পবিত্র লালন- ৯১৪/৩)। সাঁইজির এমন বাণীর অর্থ হলো; আদি সৃষ্টিকর্তার সন্ধান অনেকেই জানেন না। যিনি প্রথম বটগাছ, প্রথম-মানুষ, প্রথম ইলিশ মাছ, প্রথম হাতি ও প্রথম ঘোড়া সৃষ্টি করেছিলেন। বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা যেখানে আজ পর্যন্ত জাগতিক স্রষ্টার সন্ধান করে চলেছেন; কোনো সমাধান করতে পারছেন না। অথচ গুরুবাদীদের একদল বলে থাকেন গুরুই আমার স্রষ্টা, আরেকদল বলে থাকেন ধর্মগ্রন্থ খোঁজলেই স্রষ্টা পাওয়া যায়। যেমন; বিদ্রোহী কবি বলেছেন; “পূজিছে গ্রন্থ ভণ্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো, মানুষ এনেছে গ্রন্থ; গ্রন্থ আনে নি মানুষ কোনো।” বর্তমানে অনেক নামধারী সুফী, যোগী, ইয়োগী, কুয়ান্টাম ও সিলভা মেথডধারী সাধনহীন প্রতারক স্রষ্টার সাথে দেখা করিয়ে দেওয়ার জন্য স্রষ্টার পক্ষ থেকে টেন্ডার নিয়ে এসে বসেছেন। তারা ভক্তদের স্রষ্টার সাক্ষাৎ পাইয়ে দিয়ে থাকেন। এসব স্রষ্টাবাজ, স্রষ্টা-ব্যবসায়ী, স্বর্গবাজ, স্বর্গ-ব্যবসায়ী, পুণ্যবাজ ও পুণ্য-ব্যবসায়ী প্রতারকদের থেকে সাবধানে থাকা সব বুদ্ধিমানদের একান্ত কর্তব্য। সৃষ্টিকর্তা মতবাদের প্রকারভেদ (Variations of creator doctrine) স্রষ্টা মরমীবাদের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অনন্য সত্তা। এছাড়াও; বিজ্ঞান, দর্শন ও যুক্তিবিদ্যা ইত্যাদি বিষয়েও স্রষ্টা উপাদানটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। স্রষ্টা পরিভাষাটি বিশ্বের সব ভাষার ভাষা সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ যাবৎ বিশ্বে যত ভাষা সৃষ্টি হয়েছে, যত ভাষা সৃষ্টি হচ্ছে এবং যত ভাষা সৃষ্টি হবে, স্রষ্টা পরিভাষাটি প্রায় সব ভাষারই একটি বিশিষ্ট উপাদান। বর্ণ, শব্দ ও প্রবচন যে ভাষাসম্পদ, এতে বিশ্বের সব ভাষাবিজ্ঞানী, লেখক ও সাহিত্যিকরা একমত। কিন্তু স্রষ্টা পরিভাষাটির অভিধা নিয়ে রয়েছে ব্যাপক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। স্রষ্টা পরিভাষাটির অভিধা নিয়ে এ যাবৎ বিশ্বের পাঁচটি গোষ্ঠীর পঞ্চর্মুখী মতবাদ আমরা দেখতে পাই। এটা হতে স্রষ্টা পরিভাষাটির ন্যূনতম ৫টি অভিধা গড়ে ওঠেছে সমাজে। নিচে স্রষ্টা পরিষাভার বিভিন্ন মতবাদ তুলে ধরা হলো। সৃষ্টিকর্তা মতবাদ প্রধানত চার প্রকার। যথা; ১. সৃষ্টিকর্তার বৈজ্ঞানিক মতবাদ, ২. সৃষ্টিকর্তার দার্শনিক মতবাদ, ৩. সৃষ্টিকর্তার মরমী মতবাদ ও ৪. সৃষ্টিকর্তার মতবাদ। ১. সৃষ্টিকর্তার বৈজ্ঞানিক মতবাদ (Scientific doctrine of Creator) বিজ্ঞানীগণ বলেন যে “স্রষ্টা” পরিভাষাটি একান্তই মানুষের আবিষ্কার এবং তা অসহায় লোকের শান্তনার নিছক মাধ্যম মাত্র। স্রষ্টা পরিভাষাটিকে সৃষ্টি করেছে মানুষের প্রয়োজনে মানুষ। মানুষের সমাজ আর সমাজের সংস্কৃতি! প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার অস্তিত্ব বলে তেমন কিছুই নেই। বিজ্ঞানীদের ধারণা শক্তিই মানুষের সর্বশেষ সত্তা। শক্তির ঊর্ধ্বে আর কিছুই নেই। অদৃশ্যশক্তিই পুঞ্জিভূত হয়ে পদার্থ বা দৃশ্যবস্তুর সৃষ্টি হয়। শক্তির দৃশ্যমানরূপকে পদার্থ বলে। বহু পদার্থের সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয় জীব বা প্রাণী। বস্তুবাদী বিজ্ঞানীগণ শক্তির ঊর্ধ্বে আর কিছু পান নি। এজন্য; এখন পর্যন্ত তাদের স্রষ্টা হলো শক্তি। যেহেতু; সৃষ্টির আদিমূল অদৃশ্যশক্তি। অদৃশ্যশক্তি হতে ক্রমান্বয়ে বিশ্বজগৎ সৃষ্টি। তাদের মতে; একমাত্র শক্তি ব্যতীত স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা বলে মহাবিশ্বে অন্য কোনো স্রষ্টা বা সত্তার কোনো অস্তিত্ব নেই। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন; “ঈশ্বর হলো এ মহাজাগতিক সামগ্রিক শক্তির নাম। মানুষের স্বজ্ঞা ও প্রজ্ঞা এ সত্তাকে চিহ্নিতকরণ ও নামকরণ করেছে মাত্র (দ্বন্দ্বে ও দ্বৈরথে)।১ ২. সৃষ্টিকর্তার দার্শনিক মতবাদ (Philosophical doctrine of Creator) দার্শনিকগণ মনে করেন যে জ্ঞানই হলো ঈশ্বর বা স্রষ্টা। যেহেতু; জ্ঞান ব্যতীত কোনকিছুই সম্পাদন করা যায় না। জ্ঞানীগণ ঈশ্বরতুল্য এবং অজ্ঞানীরা পশুতুল্য। একমাত্র জ্ঞানই জীবের মননশীলতার প্রকাশ ও বিকাশ ঘটায়। জ্ঞান দ্বারাই জীবকুল স্বরূপে আত্মপ্রকাশ করে। এজন্য; দার্শনিকগণের নিকট জ্ঞানই ঈশ্বর এবং ঈশ্বরই হলেন স্রষ্টা। ৩. সৃষ্টিকর্তার মরমী মতবাদ (Mysticism of Creator) মরমীগণের মতে; স্রষ্টা তিন প্রকার। যথা; ১.আদি, ২.জনক ও ৩.স্বায়ম্ভূ। আদির সংজ্ঞা (Definition of embryonic) শ্বরবিজ্ঞানে জগতের দৃশ্য, অদৃশ্য ও স্পর্শ শক্তিগুলো ও প্রতিটি বস্তুর আদিরূপ সৃষ্টিকারীকে আদি (আদিস্রষ্টা) বলা হয়। যেমন; প্রথম-মানুষ, প্রথম হাতি, প্রথম বটগাছ ও প্রথম ইলিশ ইত্যাদি সৃষ্টিকারী। দ্বিপস্থ জীব মানুষ, গোরু, হাতি ও ইলিশ ইত্যাদি দ্বারা মরমীবাদে নর ও নারী এক জোড়া বুঝায়। যেহেতু; মরমীবাদে অর্ধাঙ্গনর ও অর্ধাঙ্গনারী মিলে একটি জীব ধরা হয়। শুধু নর অর্ধজীব এবং শুধু নারী অর্ধজীব। দ্বিপস্থ জীবের প্রতিটি প্রজাতির নর ও নারী মিলেই জীব হয়। সর্বপ্রথম জীব-জড়, আকাশ-বাতাস, নদী ও সাগরসহ জীবের মন, জ্ঞান, আত্মা, ইন্দ্রিয়, রিপু, রুদ্র, দশা, দেবতা, দেব ও দেবতা ইত্যাদির সৃষ্টিকারীই হলেন আদিস্রষ্টা। যাকে আরবিভাষায় খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) ও ইংরেজি ভাষায় Creator বলে। মরমীবাদে এর তেমন কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। ফলে; এর অধিক কোনো বর্ণনা বিশ্লেষণ কিংবা অযথা বর্ণনা দীর্ঘায়িত করাও কাম্য নয়। আদিস্রষ্টা হলেন জীব ও জড় ইত্যাদির আদি-সৃষ্টিকর্তা এটা জানাই যথেষ্ট। জনকের সংজ্ঞা (Definition of gen) শ্বরবিজ্ঞানে জীবের প্রকৃত স্রষ্টা বা সরাসরি সৃষ্টিকর্তাকে জনক বলে। যেমন; সন্তানের প্রকৃত পিতা (পালক পিতা বা শিক্ষাদীক্ষা দাতা নয়)। জনকের উপকার (Benefit of gen) ১. জনক সৃষ্টি না করলে সৃষ্টিজগৎ প্রসারিত হয় না। ২. অধিকাংশ ক্ষেত্রে সন্তান জনকের দ্বারা লালিতপালিত হয়ে আবার পিতা হন। জীবের পিতাকেই জনক বলে। শ্বরবিজ্ঞানে মানুষের পিতাকে চেনার জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে। কারণ; সাধন ও ভজনের দ্বারা যখনই কোনো মানুষ আপন পিতাকে চিনে নিতে সক্ষম হয়। তখন হতেই তার জন্মান্তর বন্ধ হয়ে যায়। পরাবিদ্যা বা পুরাণ অনুযায়ী গভীরভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়, আমিই আমার পিতা, আমিই আমার দাদা ও আমিই আমার তালুই। এ আমিই পূর্ব জীবনে দাদা রূপে আমাকে হত্যা করে দাদীর গর্ভে গিয়ে বাবা হয়ে জন্মগ্রহণ করেছিলাম। আবার বাবা রূপে আমাকে হত্যা করে মায়ের গর্ভে গিয়ে বর্তমান আমি রূপে জন্মগ্রহণ করেছি। গড়ে প্রতি ৩০৯ দিন অন্তর্বাস বা অজ্ঞাতবাস পর পর আমার দেহ বা ধড় পরিবর্তন হয়েছে মাত্র। প্রতি জীবনেই আমিই আমাকে শুক্রপাতরূপ অস্ত্র দ্বারা হত্যা করছি এবং গড়ে ৩০৯ দিন অন্তর্বাস বা অজ্ঞাতবাস থেকে চামড়া পরিবর্তন করে এসে আবারো একই কর্মে লিপ্ত হচ্ছি। আমিই আমাকে পুনঃপুন হত্যা করে জীবিত করছি। এ জীবনচক্রে একমাত্র আমি ব্যতীত আর কোনোই সঙ্গী নেই। বর্তমান বিজ্ঞানীগণ সাধুগণের এ সত্য সমীক্ষাকে আরও বলিষ্ঠ করে প্রমাণ করেছেন। তারা বলেছেন রক্তের মধ্যে এমন একটি চিহ্ন আছে যে সেটাই প্রমাণ করে সন্তানটি কার? রক্তের বিভাজন করে তারা প্রমাণ করেছেন যে পিতা ও পুত্রের রক্তের ঐ চিহ্নটির গঠন এক ও অভিন্ন এবং আমরাও বলে থাকি “শিশুই শিশুর পিতা”। এমন প্রবাদও রয়েছে- “শিশুর পিতা ঘুমিয়ে আছে সব শিশুর অন্তরে”। পরিশেষে বলা যায়; যেহেতু; জনকের ইচ্ছে ব্যতীত সন্তানের সৃষ্টি হতে পারে না; সেহেতু; জনককেও সৃষ্টিকর্তা বলা যায়। যদিও বিশ্বের আদিস্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা একজন। বাংলা পৌরাণিক সাহিত্যাদির বর্ণনা ও বৈষয়িক সাহিত্যাদির বর্ণানা হতে কাঁই ও স্রষ্টার মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। বাংলাভাষায় সৃষ্টিকর্তার নাম ছিল না। অর্থাৎ; বাঙালিদের সৃষ্টিকর্তাকে ডাকার মতো কোনো নাম ছিল না। বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টিকর্তার বাংলা অনুবাদ করার জন্য এমন একটি নামের একান্ত প্রয়োজন ছিল। সেজন্য; আমরা সর্বপ্রথম বাঙালিস্রষ্টার নামকরণ করেছি ‘কাঁই’। কিন্তু বিগত দিনে দেখা গেছে অনুবাদকরা প্রায় মনগড়া পরিভাষা দ্বারাই অনুবাদ করেছেন। কেউ আবার সাঁইকেই সৃষ্টিকর্তা বলতেন। যেমন; লালন সাঁইজি বলেছেন; “অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই, মানবের চেয়ে উত্তম কিছু নাই, দেব-দেবতাগণ করে আরাধন, জনম নিতে এ মানবে” (পবিত্র লালন- ২২৭/২)। আরও মর্মান্তিক কথা হলো; বাংলাভাষায় সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা ও নগরকর্তা কোনকিছুই এখনও সৃষ্টি করা হয় নি। এর গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো; বিগতদিনে বাংলাভাষায় কোনো পুরাণ নির্মিত হয় নি এবং এখন পর্যন্ত হচ্ছে না। পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় যতদিন পর্যন্ত পুরাণ নির্মিত না হয় ততদিন পর্যন্ত- সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা ও নগরকর্তা- এসব সত্তার নাম নির্ধারণ করা হয় না। কেবল পুরাণ নির্মাণের জন্যই এসব সত্তার নাম একান্তভাবে প্রয়োজন হয়। ইতিপূর্বে যেসব ভাষায় পুরাণ নির্মিত হয়েছে সেসব ভাষায় এসব সত্তার নামও নির্মিত হয়েছে। নিচে কাঁই ও স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরা হলো। কাঁই ও স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্য (Difference between Lord and Creator) কাঁই (Lord) স্রষ্টা (Creator) ১. বাংভারতীয় পুরাণে বর্ণিত সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাকে কাঁই বলে। ১. জাগতিক সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলে। ২. কেবল জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে কাঁই বলা হয়। ২. বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলা হয়। ৩. কাঁই কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. স্রষ্টা সারা সৃষ্টিকুলের সর্বত্র বিরাজিত। ৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা কাঁইয়ের দর্শনলাভ করে কাঁইজি বা কাঁইচারী উপাধিলাভ করা যায়। ৪. সাধন-ভজনের দ্বারা স্রষ্টার দর্শনলাভ করা যায় না। এজন্য; স্রষ্টা সম্পর্কের কোনো উপাধিও লাভ করা যায় না। ৫. জীবের প্রজনন ও অঙ্কুরোদ্গমশক্তি বহনকারী মধু ও শুক্রকে পুরাণ কাঁই বলা হয়। ৫. সর্ব সৃষ্টির স্থিতি ও রূপান্তরকারী শক্তিকে স্রষ্টা বলা হয়। ৬. কাঁই নামক সত্তাটি স্রষ্টার সৃষ্টি। ৬. স্রষ্টা বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ৭. কাঁই জীবের উত্তমাঙ্গ ও অধমাঙ্গরূপ আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। ৭. স্রষ্টা বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকারী। ৮. মানবদেহে প্রাপ্ত কাঁই নামক জীবজলটি দেখতে কালো। এজন্য; একে কালা, কেলে, শ্যাম, কালিয়া ও কৃষ্ণ ইত্যাদি বলা হয়। ৮. স্রষ্টার দর্শন পাওয়া যায় না বলে এর কোনো আকার, প্রকার ও রূপের বর্ণনা করা যায় না। ৩ স্বায়ম্ভূ (Autogenous)/ ‘مسبب’ (মুসাব্বাব) বিশ্বের বুকে সততই উৎপন্ন হয় এমন সত্তাকে স্বায়ম্ভূ বলা হয়। এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের একটি গুরুত্বপূর্ণ ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘সৃষ্টিকর্তা’ এবং এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ‘কাঁই’। সব সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণের জন্য আপনাপনিই সৃষ্টি হয় এমন বিষয়বস্তুকে স্বায়ম্ভূ বলা হয়। যেমন; সুধা, শুক্র, রজ ও কামোত্তেজনা ইত্যাদি। স্বায়ম্ভূ (বাপৌরূ)বি স্বয়ংসৃষ্ট, স্বয়ং অস্তিত্বশীল rবিণ স্বেচ্ছায় শরীরধারী (তাপ, চুম্বক, কাঁই ও সাঁই)। তবে; আধ্যাত্মিক বিজ্ঞানে স্বায়ম্ভূ পরিভাষাটির প্রকৃত-সত্তা রূপে কাঁইকেই বুঝানো হয় (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারে ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ও পুরাণের একজন ‘দেবতা’; (সংজ্ঞা) ১. সৃষ্টির কাজে অংশগ্রহণের জন্য আপনাপনিই সৃষ্টি হয় এমন বিষয়বস্তু ও শক্তিগুলোকে স্বায়ম্ভূ বলা হয় (সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রতী, রজ ও রিরংসা) ২. শ্বরবিজ্ঞানে কেবল কাঁই, সাঁই ও বসিধকে স্বায়ম্ভূ বলা হয় (বাপৌছ) আদি, সূর্য, স্রষ্টা, স্বায়ম্ভূ ও হর (বাপৌচা) অসিত, কালা, কালু, কৃষ্ণ ও ব্রহ্মা (বাপৌউ) ঘি, নীর, পীযূষ, মধু ও শস্য (বাপৌরূ) কাঁই (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা। স্বায়ম্ভূর সংজ্ঞা (Definition of autogenous) শ্বরবিজ্ঞানে সৃষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণের জন্য আপনাপনিই সৃষ্টি হয় এমন সত্তাকে স্বায়ম্ভূ বলে। যেমন; তাপ, চুম্বক, কাঁই ও সাঁই ইত্যাদি। স্বায়ম্ভূর প্রকারভেদ (Variations of autogenous) শ্বরবিজ্ঞানে স্বায়ম্ভূ দুই প্রকার। যথা; ১. ভৌতিক স্বায়ম্ভূ ও ২. জৈবিক স্বায়ম্ভূ। ১. ভৌতিক স্বায়ম্ভূ (Elementary autogenous) শ্বরবিজ্ঞানে আপনাপনি সৃষ্টি ভৌত-সত্তাকে ভৌতিক স্বায়ম্ভূ বলে। যেমন; শক্তি। দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক, ভাববাদী ও বস্তুবাদীরা সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে; যে যেমন রূপক বর্ণনাই প্রদান করুক না কেন; সবাই যার যার দৃষ্টিকোণ হতে কেবল ভৌতিক স্বায়ম্ভূ সত্তাকেই যে স্রষ্টা রূপে বুঝাতে চেষ্টা করেন; তা শক্ত করেই বলা যায়। কারণ; বিশ্বের সব সৃষ্টির আদিস্রষ্টাই হলো এসব ভৌতিক স্বায়ম্ভূ। এসব ভৌতিক স্বায়ম্ভূরাই সর্বাগ্রে স্বয়ং সৃষ্টি হয়ে সবাই যার যার কার্যাদি পরিচালনা করতে আরম্ভ করে থাকেন। এদের মধ্যে ‘শূশপ্র’ উল্লেখযোগ্য। ‘শূশপ্র’ হলো; ১. শূন্য, ২. শক্তি, ও ৩. প্রকৃতি; এ ৩টি ভৌতিক স্বায়ম্ভূ-সত্তার বাংলা নামের প্রথমবর্ণের সমষ্টিবিশেষ। ইংরেজিতে একে EEN বলা হয়। EEN হলো; 1. Ether, 2. Energy ও 3. Nature ; এ ৩টি মহান ভৌতিক স্বায়ম্ভূ-সত্তার ইংরেজি নামের প্রথমবর্ণের সমষ্টি বিশেষ। ভৌতিক স্বায়ম্ভূর পরিচয় (Identity of elementary autogenous) ১. শূন্য (Ether) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত শক্তি, পদার্থ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর যাবতীয় সঙ্কেত বহন করে চিরকাল। ২. শক্তি (Energy) শক্তিই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদার্থ, উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি ও ধ্বংস করছে। (ক). চুম্বক (Magnet) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদার্থ ও জ্যোতিষ্ক সৃষ্টি-ধ্বংস করছে। (খ). চাপ (Presser) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদার্থ ও জ্যোতিষ্ক সংকোচন-প্রসারণ ও সৃষ্টি-ধ্বংস করছে। (গ). তাপ (Temperature) এটি; প্রতিনিয়ত পদার্থকে বিগলনের মাধ্যমে নতুন নতুন পদার্থ সৃষ্টি করে চলেছে। এ শক্তিটিই অন্যান্য শক্তি, পদার্থ, উদ্ভিদ ও প্রাণীর কঠিন, তরল ও বায়বীয় অবস্থা পরিবর্তন করছে। এছাড়াও; আরও অনেক প্রকার শক্তি রয়েছে। ৩. প্রকৃতি (Nature) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পদার্থ, উদ্ভিদ ও প্রাণী সৃষ্টি করছে। ২. জৈবিক স্বায়ম্ভূ (Organic autogenous) জীবদেহে আপনাপনি যে সব স্বায়ম্ভূর অভ্যুদয় ঘটে তাকে জৈবিক স্বায়ম্ভূ বলে। যেমন; শুক্র। সাম্প্রদায়িক যাজক, সাম্প্রদায়িক মনীষী ও মরমীরা সৃষ্টিকর্তার ব্যাপারে; যে যেমন রূপক বর্ণনাই প্রদান করুক না কেন, সবাই যার যার দৃষ্টিকোণ হতে কেবল জৈবিক স্বায়ম্ভূ সত্তাকেই যে স্রষ্টা রূপে বুঝাতে চেষ্টা করেন; তা শক্ত করেই বলা যায়। কারণ; বিশ্বের সব জীব সৃষ্টির আদিস্রষ্টাই হলো এসব জৈবিক স্বায়ম্ভূ। জৈবিক স্বায়ম্ভূরাই সর্বাগ্রে স্বয়ং সৃষ্টি হয়ে সবাই যার যার জীবকোষ ও জীবসৃষ্টি কার্যাদি পরিচালনা করতে আরম্ভ করে থাকেন। জৈবিক স্বায়ম্ভূর পরিচয় (Identity of organic autogenous) জীবদেহে আপনাপনি যে সব স্বায়ম্ভূর অভ্যুদয় ঘটে তাদেরকে জৈবিক স্বায়ম্ভূ বলা হয়। অসংখ্য প্রকার জৈবিক স্বায়ম্ভূ হতে পারে। যেমন; মন, জ্ঞান, শুক্র, কাঁই, রজ, সাঁই ও দুগ্ধ। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরা হলো। ১. মন (Nous)/ ‘فؤاد’ (ফুয়াদ) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত পদার্থের রূপান্তর, উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংস ও নির্মাণের মনোকল্প সৃষ্টি করছে। ২. জ্ঞান (Wisdom)/ ‘ﻋﻟﻢ’ (ইলিম) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত পদার্থের রূপান্তর, উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংস ও নির্মাণের মনোকল্প সৃষ্টি করছে। ৩. রজ (Menses)/ ‘ﺤﻴﺾ’ (হায়েজ) এটি;ই প্রতিনিয়ত কিশোরীকে যুবতীতে পরিণত করার ঘোষণা প্রদান করে। ৪. দুগ্ধ (Milk)/ ‘حليب’ (হালিব) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত স্তন্যপায়ী প্রাণীশাবকের প্রাণ রক্ষা করে। ৫. শুক্র (Semen)/ ‘مني’ (মনিয়া) এটি;ই প্রতিনিয়ত ডিম্বক নিষিক্ত করে নতুন নতুন প্রাণী ও উদ্ভিদ সৃষ্টি করে। ৬. সুধা (Nectar)/ ‘رحيق’ (রাহিক্ব) এটি; প্রতিনিয়ত উদ্ভিদ ও প্রাণীর জরায়ুতে ভ্রূণ পালনের দায়িত্ব পালন করে। ৭. মধু (Honey)/ ‘عسل’ (আসালা) এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত শুক্র ও ডিম্বক সৃষ্টি করে। এ সত্তাটিই প্রতিনিয়ত পদার্থের রূপান্তর, উদ্ভিদ ও প্রাণীর ধ্বংস ও নির্মাণের মহাপরিকল্পনা করছে। এদের মধ্যে ‘মজ্ঞারদুশুসুম’ উল্লেখযোগ্য। ‘মজ্ঞারদুশুসুম’ হলো; ১. মন ২. জ্ঞান ৩. রজ ৪. দুগ্ধ ৫. শুক্র ৬. সুধা ও ৭. মধু; এ ৭টি জৈবিক স্বায়ম্ভূ-সত্তার বাংলা নামের প্রথমবর্ণের সমষ্টি বিশেষ। তবে; আরও ৪টি জৈবিক স্বায়ম্ভূ-সত্তা রয়েছে। তা হলো; ১. দাঁত ২. গোঁফ ৩. দাড়ি ও ৪. স্ফীতাঙ্গ। শ্বরবিজ্ঞানে এদের ব্যবহার অতি নগণ্য। সেজন্য; এসব স্বায়ম্ভূর তেমন আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন নেই। সর্বমোট ১১টি বাহ্যিক জৈবিক স্বায়ম্ভূ-সত্তা দেখা যায়। যথা; ১. মন, ২. জ্ঞান, ৩. দাঁত, ৪. গোঁফ, ৫. দাড়ি, ৬. শুক্র, ৭. স্ফীতাঙ্গ, ৮. রজ, ৯. দুগ্ধ, ১০. সুধা ও ১১. মধু। ‘মজ্ঞারদুশুসুম’ সত্তাদেরকে ইংরেজিতে 1. Nous, 2. Wisdom, 3. Menses, 4. Milk, 5. Semen, 6. Nectar & 7. Honey বলা হয়। এছাড়াও; জীবদেহে আরও কয়েক হাজার স্বায়ম্ভূ রয়েছে। যেমন; রক্ত ও রস ইত্যাদি। যে সূক্ষ্মশক্তি জীবের বংশবৃদ্ধি বা বীজের ভ্রূণ-অঙ্কুর উৎপাদনের জন্য অদৃশ্যভাবে আপনাপনি সৃষ্টি হয় তাকেই আমরা জৈবিক স্বায়ম্ভূ নামে চিনি ও জানি। এদেরকেই বাংলা ভাষায় কাঁই, সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মা, আরবি ভাষায় আল্লাহ (الله) এবং ইংরেজি ভাষায় Lord বলে অভিহিত করা হয়। পুরাণে এর বর্ণনা বিশ্লেষণ অপেক্ষাকৃত অধিক। জৈবিক স্বায়ম্ভূরা শুধু জীবজগতের সৃষ্টিকর্তা। জড় পদার্থের বংশ বৃদ্ধির প্রয়োজন হয় না বলে জড় পদার্থ বিভাগে জৈবিক স্বায়ম্ভূর কোনো প্রয়োজন হয় না। সাধনজগতে স্বায়ম্ভূর সাক্ষাত প্রাপ্তিই হলো সাধকগণের সর্বশেষ বা সর্বোচ্চ শ্রেণি। একেক জীবের বেলায় আত্মাবহনকারী জৈবিক স্বায়ম্ভূর বর্ণ একেক প্রকার লক্ষ্য করা যায়। যেমন; হাঁস ও কুক্কটের ক্ষেত্রে ডিমের কুসুম অংশে এর বর্ণ হলদে দেখা যায়। মানুষের ক্ষেত্রে স্বায়ম্ভূর বর্ণ কালো দেখা যায়। সাধনবলে এর সন্ধানলাভ করা যায়। এটা সুস্বাদু, সুপেয় কালোবর্ণের সুমিষ্ট জীবজল বা জীবাম্বু বিশেষ। এ রস একবার পান করলে মানুষের কাম পিপাসা অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং জন্ম-মরণের হাত হতে মুক্তি পাওয়া যায়। এ রসের সন্ধানলাভকারী সাধুকগণকে বাংলাভাষায় কাঁইজি, সংস্কৃতভাষায় ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মচারী, আরবি ভাষায় ‘مسترشيب’ (মুস্তারাশিব), ‘ﻮﻟﻰﺍﻠﻟﻪ’ (অলিউল্লাহ) এবং ইংরেজি ভাষায় Lordship, Mastership বলা হয়। জৈবিক স্বায়ম্ভূ জীবদেহে অবতরণ না করা পর্যন্ত জীবের পুনর্জন্ম শক্তির উদয় হয় না। আবার জৈবিক স্বায়ম্ভূ শক্তির অবতরণের পর অন্য কোনো কৃত্রিমশক্তি দ্বারা তাকে আঘাত করলে বা হত্যা করলে বীজের অঙ্কুরোদ্গম হয় না। যেমন; ধান বা ডিম আগুনে সিদ্ধ করলে বা জল দ্বারা পচন করলে তা আর অঙ্কুরিত হয় না। প্রাণাধার বা ভ্রূণকোষ সিদ্ধ করলে বা পচন করলে যে শক্তি মারা যায় তা-ই জীবের জৈবিক স্বায়ম্ভূ শক্তি। জৈবিক স্বায়ম্ভূ শক্তি মারা গেলে জীবের স্বায়ম্ভূ রসও অদৃশ্য হয়ে যায়। এ শক্তি জীবদেহে চৈতন্যপ্রাপ্ত হয়ে জীবের জীবন্তকোষ সৃষ্টি করে বলে শ্বরবিজ্ঞানে একেই সৃষ্টিকর্তা বলা হয়। জৈবিক স্বায়ম্ভূ ব্যতীত জীব হতে জীব সৃষ্টির কোনো উপায় নেই। এ স্বায়ম্ভূর ১. সৃষ্টিকর্তা, ২. পালনকর্তা, ৩. শুক্র, ৪. রজ, ৫. দুগ্ধ ও ৬. কামোত্তেজনা ইত্যাদি ব্যতীত কখনই সৃষ্টি কার্যাদি সম্ভব নয়। জীব হতে জীব সৃষ্টিকার্যের সাথে জৈবিক স্বায়ম্ভূর আলোচ্য সত্তাগুলো কোনো না কোনভাবে জড়িত। এগুলো দেখা যায়, ধরা যায় ও ছোঁয়া যায়। মানবের উপাস্য হলে জৈবিক স্বায়ম্ভূর (এ স্তরের) সত্তাগুলোর মধ্যে হতে কোন-কোনটি হতে পারে কিন্তু ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না ও সাধনবলে পাওয়া যায় না, এমনকি; সাধনের প্রক্রিয়া পর্যন্ত জানা যায় না। এমন অধর ও অদৃশ্য কোনকিছুই মানবের উপাস্য হতে পারে না। অর্থাৎ; ভৌতিক স্বায়ম্ভূ মানুষের উপাস্য বা ভজন পূজনের বস্তু নয় বরং জৈবিক স্বায়ম্ভূ বা এর কোনো সত্তাই মানবের প্রকৃত উপাস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখে। স্বায়ম্ভূর সত্তাগুলোর মধ্যে কোনটি প্রত্যক্ষ এবং কোনটি পরোক্ষভাবে মানুষের উপাস্য। তারমধ্যে; সুধা ও মধু মানুষের প্রত্যক্ষ উপাস্য এবং শুক্র ও দুগ্ধ মানুষের পরোক্ষ উপাস্য। স্বায়ম্ভূ রস একবার পান করলে মানুষের কাম পিপাসা হ্রাস পায় এবং সন্তানরূপ জন্ম এবং শুক্রপাতরূপ মরণের হাত হতে মুক্তি পাওয়া যায়। আলোচ্য ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা’র বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান, চারিত্রিক ও ছদ্মনাম পরিভাষার আলোচনা যথাস্থানে করা হয়েছে। ৪. সৃষ্টিকর্তার মতবাদ (Schismatic doctrine of Creator) বিশ্বের প্রথম মানুষ, প্রথম গোরু, প্রথম তেঁতুল গাছ ও প্রথম ইলিশ ইত্যাদি, অর্থাৎ; বিশ্বের সব জীবের প্রথমটি এবং সব জড় পদার্থ ও আদি-শক্তিগুলো সৃষ্টিকারীই প্রকৃত স্রষ্টা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু কে এসব সৃষ্টি করলেন? তিনি কোথায় রইলেন? কী সাধনে তারে পাওয়া যাবে? এসব ব্যাপারে এযাবৎকালের সব সাম্প্রদায়িক নীতিমালার মধ্যে কিছু পুরাণ, কিছু রূপক উপন্যাস ও কিছু লোকশ্রুতি ব্যতীত আর কিছুই পাওয়া যায় না। স্রষ্টা মানুষের নিকট এমন একটি নাম- যা ধরা, ছোঁয়া বা দেখার কোনো উপায় নেই। যেমন; ডুমরের ফুল, সাপের পা ও ঘোড়ার ডিম ইত্যাদির মাত্র শব্দ শোনা যায় ও গ্রন্থের পাতায় পাতায় মাত্র লেখা দেখা যায় কিন্তু তা ধরা, ছোঁয়া বা পাওয়া ও খাওয়ার কোনো উপায় নেই। তাদৃশ স্রষ্টারও শুধু নামই পাওয়া যায়। তাঁকে ধরা ও ছোঁয়ার কোনো ব্যবস্থা প্রদান করা যায় না। স্রষ্টা বিশ্বের সবকিছুর স্বয়ং সৃষ্টিকারী কিন্তু নিজে কারো দ্বারা সৃষ্ট নয় ইত্যাদি ইত্যাদি। বিশ্বের বিভিন্ন মতবাদের সাম্প্রদায়িক মনীষীগণ বলেন যে স্রষ্টা নিরাকার। অদৃশ্য বা নিরাকার হয়েও তিনি দেখেন, শোনেন, সবকিছু বোঝেন, তাঁর মহিমাময় হাত, পা, চোখ, কান ও মুখ সবই আছে। তাঁর রাগ আছে, তিনি সন্তুষ্ট ও অসন্তুষ্ট হন। প্রয়াত মানুষ ও দৈত্যদের পুণ্যের পুরস্কার ও পাপের শাস্তি প্রদান করেন। স্রষ্টার কোনো আকার নেই, তিনি অদৃশ্য মহাশক্তি। স্রষ্টাই বিশ্বচরাচর সৃষ্টি করেছেন। মানুষ স্রষ্টার একটি বিশেষ সৃষ্টি ইত্যাদি ইত্যাদি। মোটকথা সাম্প্রদায়িক বিশেষজ্ঞ বা সাম্প্রদায়িক মনীষীদের বড়কথা হলো; স্রষ্টা নিরাকার। বিশ্বের সুমহান রূপকারগণের মনের মাধুরিতে নির্মিত ঈশ্বর এবং সাম্প্রদায়িক মনীষী বক্তাদের কল্পিত ঈশ্বর ও জাগতিক স্রষ্টার মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে নির্মিত ঈশ্বর ও স্রষ্টার পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো। ঈশ্বর ও স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্য (Difference between God and Creator) ঈশ্বর (God) স্রষ্টা (Creator) ১. শ্বরবিজ্ঞানে সাম্প্রদায়িক বৌদ্ধদের স্রষ্টাকে ঈশ্বর বলে। ১. জাগতিক সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলে। ২. কেবল জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে ঈশ্বর বলা হয়। ২. বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলে। ৩. ঈশ্বর কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. স্রষ্টা সারা সৃষ্টিকুলের সর্বত্র বিরাজিত। ৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা ঈশ্বরের দর্শনলাভ করা যায়। এজন্য; ঈশ্বর সম্পর্কিত অনেক উপাধিও লাভ করা যায়। যেমন; বীরেশ্বর। ৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা স্রষ্টার দর্শন-লাভ করা যায় না। এজন্য; স্রষ্টা সম্পর্কিত কোনো উপাধিও লাভ করা যায় না। ৫. জীবের প্রজননশক্তি ও উদ্ভিদের অুর উদ্গমশক্তি বহনকারী মধু, শুক্র ও সুধা রসত্রয়কে ঈশ্বর বলা হয়। ৫. সর্বসৃষ্টির স্থিতি ও রূপান্তরকারী শক্তিকে স্রষ্টা বলা হয়। ৬. ঈশ্বর নামক সত্তাটি স্রষ্টার সৃষ্টি। ৬. স্রষ্টা বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ৭. ঈশ্বর জীবের উত্তমাঙ্গ ও অধমাঙ্গ নামক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। ৭. স্রষ্টা মাথার ওপরে অবস্থিত আকাশ ও পায়ের নিচে অবস্থিত পৃথিবী এবং বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকারী। ৮. মানবদেহে প্রাপ্ত ঈশ্বর নামক জীবজল দুই প্রকার। যথা; ১.শ্বেতবর্ণ ও ২.কৃষ্ণবর্ণ। ৮. স্রষ্টার দর্শন পাওয়া যায় না বলে এর কোনো আকার, প্রকার ও রূপের বর্ণনা করা যায় না। এছাড়াও; সৃষ্টিকর্তাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা; ১. জাগতিক স্রষ্টা ২. সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা ও ৩. পারম্পরিক স্রষ্টা। ১. জাগতিক স্রষ্টা (Mundane Creator) জাগতিক স্রষ্টা (বাপৌরূ)বি সারা জগতের সৃষ্টিকারী, বিশ্বজগৎ সৃজনকারী। ১. নিরাকার সৃষ্টিকর্তাকে জাগতিক স্রষ্টা বলে। ২. সারাজগতের সৃষ্টিকারীকে রূপকভাবে জাগতিক স্রষ্টা বলে। জাগতিক স্রষ্টার পরিচয় (Identity of mundane Creator) নিখিল মহাবিশ্বের সৌরজগৎ, সূর্য, চন্দ্র, আকাশ, বাতাশ, সাগর, নদী, পাহাড়, পর্বত, প্রাণী, উদ্ভিদ ও মৎস্য এসব যিনি সৃষ্টি করেছেন তিনিই জাগতিক স্রষ্টা। আজ পর্যন্ত তার আকার, আকৃতি, বর্ণ ও লিঙ্গ কেউই বর্ণনা করেন নি। জাগতিক স্রষ্টার আকার, আকৃতি ও প্রকৃতি ব্যাপারে বিজ্ঞানী, দার্শনিক, জ্যোতিষী ও মরমীগণ চিরকালের জন্যই চির নীরব। তবু যারা জাগতিক স্রষ্টা সম্পর্কে কিছু বলার চেষ্টা করেছেন। তারা সবাই বলেছেন; “জাগতিক স্রষ্টা হয়তোবা শক্তি রূপে নয়তোবা জ্ঞান রূপে নিরাকার। অথবা প্রকৃতি রূপে চির বর্তমান।” একদল দার্শনিক বলেন; “যেহেতু; জ্ঞানই বিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করে; সেহেতু; কোনো সত্তাকে স্রষ্টা বলতে হলে একমাত্র জ্ঞানকেই স্রষ্টা বলে স্বীকার করা যায়।” এ কারণেই; জ্ঞান ব্যতীত অন্য কোনো সত্তাকে দার্শনিকগণ স্রষ্টা বলে স্বীকার করতে চান না। বিজ্ঞানীরা কোনো সত্তাকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করতেই চান না। তবে; কোনো কোনো বিজ্ঞানী নিরাকার শক্তিগুলোকে স্রষ্টা বলে স্বীকার করে থাকেন। তারা বলেন; “প্রকৃতি ভিন্ন স্রষ্টা বলে কোনো সত্তার অস্তিত্ব এ বিশ্বজগতে নেই। তবুও; অগত্যা স্রষ্টা বলে যদি কোনো সত্তার অস্তিত্ব স্বীকার করতে বা গ্রহণ করতেই হয়- তবে তা অবশ্যই শক্তিকে গ্রহণ করতে হবে।” তাদের সূত্র হলো; পদার্থের তিনটি অবস্থা- ১.কঠিন, ২.তরল ও ৩.বায়বীয়। সব কঠিন পদার্থ তাপ দিলে তরল হয় এবং সব তরল পদার্থ তাপ দিলে বায়বীয়রূপ লাভ করে। পদার্থের বায়বীয় রূপটি নিরাকার। এজন্য; পদার্থের এ নিরাকার রূপকেই শক্তি বলা হয়। সব পদার্থই কখনও কঠিন, কখনও তরল ও কখনও শক্তি রূপে বিরাজ করে। বিজ্ঞানীরা বলে থাকেন- “শক্তি কখনও শীতল হয়ে তরলরূপ লাভ করে পরবর্তীকালে আরও শীতল হলে কঠিনরূপ লাভ করে।” অর্থাৎ; শক্তিই কখনও তরল আবার কখনও কঠিন আকার ধারণ করে। বায়বীয়, তরল ও কঠিন পদার্থ বিজ্ঞানের শক্তির এ ত্রি-রূপকে- শ্বরবিজ্ঞানে ‘নিরাকার’, ‘সাকার’ ও ‘আকার’ বলা হয়। পদার্থ নিরাকার শক্তিতে রূপান্তরিত হলে একই সময়ে বিশ্বের সর্বত্রই বিরাজ করতে পারে। যেমন; ether। বিজ্ঞানের এ মতবাদটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় শক্তি শীতল হয়ে বায়বীয় ⇒ তরল ⇒ কঠিন রূপ লাভ করছে। আবার তাপ প্রয়োগের কারণে পদার্থ কঠিন ⇒ তরল ⇒ বায়বীয় ⇒ শক্তিরূপ লাভ করছে। পদার্থের এ রূপান্তর ক্রিয়ার মধ্যে অন্য কোনো সত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। এ হতেই বিজ্ঞানীগণ বলেন যে “স্রষ্টা বলে যদি কোনকিছু থেকেই থাকে তবে অবশ্যই তা হলো শক্তি।” পর্যালোচনা (The discussion) স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় কিছু শক্তি, কিছু বায়বীয়, কিছু তরল ও কিছু কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে জীবদেহ সৃষ্টি হয়। এ জীব বেঁচে থাকার জন্য প্রধানত দুটি শক্তির প্রয়োজন হয়। যথা; জীবাত্মা ও পরমাত্মা। জীবাত্মা জীবদেহের ভিতরে অবস্থিত কিন্তু পরমাত্মা বিশ্বের সর্বত্র বিরাজিত। কোনো কারণে জীবাত্মা নিষ্ক্রিয় করা হলে জীবের প্রয়াণসাধিত হয়। অর্থাৎ; শক্তির এ রূপান্তর সূত্র হতে বলা যায়- শক্তিই বায়বীয়, শক্তিই তরল, শক্তিই কঠিন, শক্তিই আত্মা আবার শক্তিই জীবদেহ। বিস্তারিত আলোচনা ও পর্যালোচনার পরও মহাজগতে একমাত্র শক্তি ভিন্ন অন্য কোনো সত্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায় না বলে স্রষ্টা রূপে ভিন্ন কোনো সত্তার অস্তিত্বের কল্পনা করারও কোনো সুযোগ নেই। এবার প্রশ্ন হতে পারে- শক্তিটা সৃষ্টি হলো কিরূপে? শক্তি সৃষ্টি করতে কী স্রষ্টার প্রয়োজন হয় নাই? এ প্রশ্নের উত্তরে এতটুকু বলা যায়- মহাশূন্যের মহাধারে প্রতিনিয়ত অসংখ্য শক্তি, এক শক্তি হতে অন্য শক্তিতে রূপান্তর হচ্ছে। শক্তির রূপান্তর হওয়া প্রকৃতির অমোঘ লীলা বৈ নয়। প্রকৃতির অমোঘ লীলায় অংশগ্রহণের জন্য শক্তি ভিন্ন অন্য কোনো সত্তার অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞানীগণের প্রদত্ত তথ্যাদি গবেষণা করে শক্ত করেই বলা যায়- একমাত্র শক্তি ভিন্ন অন্য কোনো স্রষ্টার অস্তিত্ব মহাজগতে নেই। বিজ্ঞানী ও দার্শনিকগণের বর্তমান মতবাদ হতে দেখা যায়- জাগতিকস্রষ্টা শক্তি হোক বা জ্ঞানই হোক- এদের কোনো আকৃতি, বর্ণ বা লিঙ্গ নেই। ২. সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা (Schismatical Creator) সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা (বাপৌরূ)বি ধর্মগ্রন্থাদিতে বর্ণিত স্রষ্টা, সৃষ্টি ক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী সত্তা {সং. শাস্ত্র+> সং. স্রষ্টা} সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার ১টি উদ্ধৃতি (A quotations of schismatical Creator) ১. “আরবিরা যারে আল্লাহ কয়, সংস্কৃতিতে সে ব্রহ্মা হয়, সবাই কাঁই- ডাকি বাংলায়, বলন কয় সৃষ্টিকর্তা ভুলে।” (বলন তত্ত্বাবলী- ২৫)। সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার সংজ্ঞা (Definition of schismatic Creator) ১. সাধারণত; অন্ধবিশ্বাসী সাম্প্রদায়িক মনীষীদের নির্মিত স্রষ্টাকে সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা বলে। ২. সাধারণত; বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও পুরাণে বর্ণিত স্রষ্টাকে সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা বলে। যেমন; কাঁই, ব্রহ্মা, Lord ও আল্লাহ (আ.ﺍﻟﻟﻪ) ইত্যাদি। সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার পরিচয় (Identity of schismatic Creator) বাংভারতীয় উপমহাদেশের বৈদিক সাহিত্য ও পুরাণের স্রষ্টা ‘ব্রহ্মা’। বাংভারতীয় পুরাণে বর্ণিত; সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা, পালনকর্তা বিষ্ণু, সংহারকর্তা মহাদেব, আদিমানব মনু বা গোবিন্দ, আদিমানবী সরম্বতী, স্বর্গ ৮টি ও নরক ২৭টি। অন্যদিকে; আরবীয় উপমহাদেশের কৌরানী সাহিত্যের স্রষ্টা আল্লাহ (ﺍﻟﻟﻪ), পালনকর্তা রব (ﺭﺐ), সংহারকর্তা আঝরাঈল (ﻋﺫﺭﺍﺌﻴﻞ), আদিমানব আদম (ﺁﺪﻢ), আদিমানবী হাওয়া (ﺤﻮﺍﺀ), স্বর্গ ৮টি এবং নরক ৭টি। এভাবে বিশ্বে যতটি মতবাদ রয়েছে ততটি ভিন্ন ভিন্ন সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা, আদিমানব, আদিমানবী, বর্থ্য, স্বর্গ ও নরক রয়েছে। কিন্তু মজার বিষয় হলো; এসব না জেনে ও না বুঝে কেবল সাম্প্রদায়িক-সত্তা নিয়েই সাম্প্রদায়িকরা অযথা গণ্ডগোল ও মারামারি করে থাকেন। ব্রহ্মার বিবরণ (Description of Jehovah) ব্রহ্মা (বাপৌরূ)বি অগ্নি, অনাদি, অনন্ত, বিধাতা, সৃষ্টিকর্তা, জগৎস্রষ্টা, কমলাসন, চতুরানন, প্রজাপতি, হিরণ্যগর্ভ, বিবস্বান, বিরিঞ্চি, স্বায়ম্ভূ (বাপ) ঈশ্বর, কাজলা, কালা, কালিয়া, কেলে, কৃষ্ণ, বিরিঞ্চি, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা, Lord (পরি) মানবদেহে প্রাপ্ত কালোবর্ণের মানবজল বা মধুবৎ মিষ্ট অমৃতসুধা (শ্ববি) সৃষ্টিকর্তা, নির্মাতা, creator, অথর, খালিক্ব (خَالِقٌ); (ইদে) আল্লাহ (الله), ঈসা (عِيْسَىْ), মাসীহ (مَسِيْحٌ), শাম (شَأْمٌ), শামস (شَمْسٌ), শীশ (شِيْشٌ) (ইংপ) Lord, maker, designer (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. বাংভারতীয় পুরাণ মতে; সাম্প্রদায়িক সৃষ্টিকর্তাকে ব্রহ্মা বলা হয় ২. সৃষ্টিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী অনুঘটককে সৃষ্টিকর্তা বা রূপকভাবে ব্রহ্মা বলা হয় (বাপৌছ) আদি, ব্রহ্মা, স্রষ্টা, স্বায়ম্ভূ ও হর (বাপৌচা) অসিত, কালা, কালু, কৃষ্ণ ও ব্রহ্মা (বাপৌউ) ঘি, নীর, পীযূষ, মধু, শস্য ও সূর্য (বাপৌরূ) কাঁই (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা Jস্ত্রী ব্রহ্মাণী। “যখন ছিল বিম্বুমণি, ধরেছিল মা জননী, ডিম্বে উষুম দিলো শুনি, ধরে ব্রহ্মা আকার।” (পবিত্র লালন- ৫০৮/৩)। চমৎকার (Myth)
মহাপ্রলয়ের শেষে এ জগৎ যখন অন্ধকারময় ছিল তখন এক বিরাট মহাপুরুষ পরমব্রহ্ম নিজের শক্তি সে অন্ধকার দূর করে জলের সৃষ্টি করেন। সে জলে সৃষ্টির বীজ নিক্ষিপ্ত হয়। পরে ঐ বীজ সুবর্ণময় অণ্ডে পরিণত হয়। অণ্ড মধ্যে ঐ বিরাট মহাপুরুষ স্বয়ং ব্রহ্মা রূপে অবস্থান করতে থাকেন। তারপর; অণ্ডটি দুইভাগে বিভক্ত হলে, একভাগ আকাশে এবং অন্যভাগ ভূমণ্ডলে পরিণত হয়। অতঃপর; ব্রহ্মা ১. মরীচি; ২. অত্রি; ৩. অঙ্গিরা; ৪. পুলস্ত্য; ৫. পুলহ; ৬. ক্রতু; ৭. বশিষ্ঠ; ৮. ভৃগু; ৯. দক্ষ ও ১০. নারদ- এ দশজন প্রজাপতিকে মন হতে উৎপন্ন করেন। এসব প্রজাপতি হতে সব প্রাণী উদ্ভব হয়। ব্রহ্মা নারদকে সব সৃষ্টির ভার নিতে বলেন কিন্তু ব্রহ্ম সাধনায় বিঘ্ন হবে বলে নারদ সৃষ্টির ভার নিতে অসম্মত হন। এজন্য; ব্রহ্মার শাপে তাকে গন্ধর্ব ও মানুষ্য কুলে জন্মগ্রহণ করতে হয়েছিল। সরস্বতী ব্রহ্মার স্ত্রী। দেবসেনা ও দৈতসেনা ব্রহ্মার দুই কন্যা।
ব্রহ্মা চতুর্ভুজ, চতুরানন ও রক্তবর্ণ। প্রথমে তাঁর পাঁচটি মাথা ছিল। কিন্তু একদা শিবের প্রতি অসম্মানজনক বাক্য উচ্চারণ করায় শিবের তৃতীয় নয়নের অগ্নিতে ব্রহ্মার একটি মস্তক দগ্ধ হয়। ব্রহ্মার বাহন হংস। বেদে কিংবা ব্রাহ্মণে ব্রহ্মার নাম পাওয়া যায় না। সেখানে সৃষ্টিকর্তাকে হিরণ্যগর্ভ প্রজাপতি বলা হয়েছে। তাহলে শক্ত করেই বলা যায় এ অনুপম নামটি পৌরাণিক রূপকাররাই নির্মাণ করেছেন। একথা আজ দিবালোকের মত সত্য যে মানুষ মানুষের প্রয়োজনেই বৈষয়িক সাহিত্য ও পুরাণ যুগে যুগে সৃষ্টি করেছেন। অন্যান্য শিল্পের মতো সাহিত্য নির্মাণ করাও এক প্রকার শিল্প। এটিকে সাহিত্য শিল্প বলে। এ শিল্পটি অত্যন্ত কঠিন। এজন্য; অল্পসংখ্যক সাধককেই পুরাণ নির্মাণ করতে দেখা যায়। অনেক সময় কয়েক শতাব্দীর মধ্যেও একজন বড় পৌরাণিক সাহিত্যিক বা রূপকার দেখা যায় না। কয়েক শতাব্দী পরপর দুয়েকজন সাধারণ সাহিত্যিক দেখা গেলেও কয়েক হাজার বছর পরপরও একজন রূপকার দেখা যায় না। অর্থাৎ; সাধারণ সাহিত্যিক হওয়া যত কঠিন পৌরাণিক সাহিত্যিক বা রূপকার হওয়া তার চেয়েও অধিক অধিক কঠিন। পৌরাণিক রূপকার মহা মনীষীগণের সুনিপুণ বর্ণনা ও সাম্প্রদায়িক মনীষী ও বক্তাদের লম্বা লম্বা আলোচনা হতে ব্রহ্মা ও স্রষ্টার মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। ব্রহ্মা ও স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্য (Difference between Lord and Creator) ব্রহ্মা (Bigwig) স্রষ্টা (Creator) ১. শ্বরবিজ্ঞানে সাম্প্রদায়িক হিন্দুদের সৃষ্টিকর্তাকে ব্রহ্মা বলে। ১. জাগতিক সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলে। ২. কেবল জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে ব্রহ্মা বলা হয়। ২. বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তাকে স্রষ্টা বলে। ৩. ব্রহ্মা কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. স্রষ্টা সারা সৃষ্টিকুলের সর্বত্র বিরাজিত। ৪. সাধন ভজনের দ্বারা ব্রহ্মার দর্শনলাভ করে ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মচারী উপাধিলাভ করা যায়। ৪. সাধন ভজনের দ্বারা স্রষ্টার দর্শনলাভ করা যায় না। এজন্য; স্রষ্টা সম্পর্কিত কোনো উপাধিও লাভ করা যায় না। ৫. শ্বরবিজ্ঞানে জীবের প্রজনন ও উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গমশক্তি বহনকারী মধু, শুক্র ও সুধারসকে ব্রহ্মা বলা হয়। ৫. সর্ব সৃষ্টির স্থিতি ও রূপান্তরকারী শক্তিকে স্রষ্টা বলা হয়। ৬. ব্রহ্মা নামক সত্তাটি স্রষ্টার সৃষ্টি। ৬. স্রষ্টা বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ৭. ব্রহ্মা জীবের উত্তমাঙ্গ ও অধমাঙ্গ নামক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। ৭. স্রষ্টা মানুষের মাথার ওপরে অবস্থিত আকাশ ও পায়ের নিচে অবস্থিত পৃথিবী এবং বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকারী। ৮. মানবদেহে প্রাপ্ত ব্রহ্মা নামক জীবজল দেখতে কালো। তাই; একে কাঁই, কালা, শ্যাম ও কৃষ্ণ ইত্যাদি বলা হয়। ৮. স্রষ্টার দর্শন পাওয়া যায় না বলে এর কোনো আকার, প্রকার ও রূপের বর্ণনা করা যায় না। কুরয়ানে আল্লাহ পরিভাষাটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। কুরয়ানের ভাষায় আল্লাহকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে আল্লাহই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আল্লাহ কারো দ্বারা সৃষ্টি নয়। কুরয়ানের কোথাও কোথাও বলা হয়েছে আল্লাহ ও রাসুলের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। যেমন; “ إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا(১৫০) أُوْلَئِكَ هُمْ الْكَافِرُونَ حَقًّا وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا(১৫১) وَالَّذِينَ آمَنُوا بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَلَمْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ أَحَدٍ مِنْهُمْ أُوْلَئِكَ سَوْفَ يُؤْتِيهِمْ أُجُورَهُمْ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا(১৫২)” অর্থ; “যারা কাঁই ও সাঁইয়ের প্রতি অস্বীকারকারী এবং নিশ্চয় যারা কাঁই ও সাঁইয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনে পার্থক্য সৃষ্টি করতে চায়- এবং বলে যে আমরা কাউকে বিশ্বাস করি এবং কাউকে অবিশ্বাস করি না এবং এরই মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন করতে চায় (১৫০)। প্রকৃতপক্ষে এরাই সত্য অস্বীকারকারী। আর অস্বীকারকারীদের জন্য আমরা নির্মাণ করেছি অপমানজনক শাস্তি (১৫১)। যারা কাঁই ও সাঁইয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং তাদের মধ্যে কাউকে অস্বীকার করে নি। শিঘ্রই তাদের প্রতিদান দেওয়া হবে। কাঁই ক্ষমাশীল ও দয়ালু” (কুরয়ান, নিসা- ১৫০-১৫২)। আল্লাহর (ﺍﻟﻟﻪ) বিবরণ (Description of the Lord) আল্লাহ [ﺍﻠﻠﻪ] (আপৌছ)বি সৃষ্টিকর্তা, ঈশ্বর, অগ্নি, অনাদি, অনন্ত, বিধাতা, বিবস্বান, স্বায়ম্ভূ, creator, author, খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) (শ্ববি) কাঁই, কালা, কৃষ্ণ, বিরিঞ্চি, ব্রহ্মা, শ্যাম (ইদে) ঈসা (عِيْسَىْ), ইসামসিহ্ (আ.ﻋﻴﺲٰ ﻤﺴﻴﺢ), মাসীহ (مَسِيْحٌ), শাম (شَأْمٌ), শামস (شَمْسٌ), শীশ (شِيْشٌ) (ইংপ) Lord, maker, producer, designer (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সারা জগতের সৃষ্টিকারীকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়। ২. সৃষ্টিক্রিয়াই সরাসরি অংশগ্রহণকারীকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়। (বাপৌছ) আদি, স্রষ্টা, স্বায়ম্ভূ ও হর (বাপৌচা) অসিত, কালা, কালু, কৃষ্ণ ও ব্রহ্মা (বাপৌউ) ঘি, নীর, পীযূষ, মধু, শস্য ও সূর্য (বাপৌরূ) কাঁই (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা {আ.} চমৎকার (Myth)
আরবীয় পুরাণ মতে; সারা জগতের স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা। বাংলা শ্বরবিজ্ঞানে একে কাঁই ও সংস্কৃত শ্বরবিজ্ঞানে একে ব্রহ্মা বলা হয়। এর কোনো আকার, আকৃতি নেই। তবে; তাঁর হাত, পা ও মুখ ইত্যাদি রয়েছে। তিনি আসনে বসেন, রাগান্বিত হন ও জীবকুলের কল্যাণ করেন। তিনি নিজে পৃথিবীতে আসেন না। তবে; তার দেবতাগণের মাধ্যমে সাংবাদিকগণের নিকট বাণী প্রেরণ করে থাকেন। ইসলামী পুরাণ অনুসারে; পবিত্র তৌরাত, যাবুর, ইঞ্জিল ও কুরয়ান তাঁরই প্রদত্তবাণী। প্রয়াণোত্তরকালে তিনি পুণ্যবানদের পুরস্কার ও পাপীদের শাস্তি প্রদান করে থাকেন। তিনি কাউকে জন্মও দেন নি এবং তিনি কারো নিকট হতে জন্মগ্রহণও করেন নি। বর্তমানে তাঁর অবস্থান সপ্ত আকাশের ওপর (মি’রাজের রূপক বর্ণনা মতে)। তথাপিও তিনি সদা সর্বত্র বিরাজমান।
পবিত্র কুরয়ান ও ইসলামী পুরাণ অনুসারে; আল্লাহ ও খালিক্বের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তারা বলেন খালিক্ব হলো আল্লাহর গুণবাচক নাম। এটি; তাদের একেবারেই স্থূল দৃষ্টিভঙ্গির কথা। প্রকৃত বিষয় হলো; আল্লাহ মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক সৃষ্টিকর্তা এবং খালিক্ব তাদের জাগতিক সৃষ্টিকর্তা। মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক মনীষীগণ বলেন যে আল্লাহুই সৃষ্টিকর্তার মূলনাম এবং অন্যান্য নামগুলো আল্লাহুর গুণবাচক নাম। কিন্তু বিষয়টি এভাবে মীমাংসিত হয় না কারণ সৃষ্টিকর্তাকে কেবল সৃষ্টিকর্তাই বলা হয়। অন্যান্য গুণবাচক নামে যাকে ডাকা হয় তিনি আদৌ জাগতিক সৃষ্টিকর্তা নন বরং তিনি হলেন স্বয়ং স্বায়ম্ভূ- যিনি বিশ্বের প্রতিটি জীবের মধ্যে আপনাপনিই সৃষ্টি হয়ে জীবের সৃষ্টিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেন। জাগতিক স্রষ্টা এবং মরমীবাদের স্রষ্টা কখনই এক নন। নিচে আল্লাহ ও খালিক্বের মধ্যে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো। আল্লাহ ও খালিক্বের মধ্যে পার্থক্য (Difference between Lord and Creator) আল্লাহ (اللَّهُ) খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) ১. মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাকে আরবি ভাষায় আল্লাহ (اللَّهُ) বলে। ১. জাগতিক স্রষ্টাকে আরবি ভাষায় খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) বলে। ২. কেবল জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে আল্লাহ (اللَّهُ) বলা হয়। ২. বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তাকে খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) বলা হয়। ৩. আল্লাহ (اللَّهُ) কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) সারা সৃষ্টিকুলে সর্বত্র বিরাজিত। ৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা আল্লাহর
(اللَّهُ) দর্শনলাভ করে ওলিউল্লাহ (ﻮﻟﻰ ﺍﻟﻟﻪ) উপাধি-লাভ করা যায়।
৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা খালিক্বের (ﺨﺎﻟﻖ) দর্শনলাভ করা যায় না। এজন্য; খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) সম্পর্কের কোনো উপাধিও লাভ করা যায় না। ৫. শ্বরবিজ্ঞানে জীবের প্রজননশক্তি ও উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গমশক্তি বহনকারী মধু, শুক্র ও সুধা রসকে আল্লাহ (اللَّهُ) বলা হয়। ৫. সর্ব সৃষ্টির স্থিতি ও রূপান্তরকারী শক্তিকে আরবি ভাষায় খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) বলা হয়। ৬. আল্লাহ (اللَّهُ) নামক সত্তাটি খালিক্বের (ﺨﺎﻟﻖ) সৃষ্টি। ৬. খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ৭. আল্লাহ (اللَّهُ) জীবের উত্তমাঙ্গ ও অধমাঙ্গ নামক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। ৭. খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ) মানুষের মাথার ওপরে অবস্থিত আকাশ ও পায়ের নিচে অবস্থিত পৃথিবী এবং বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকারী। ৮. মানবদেহে প্রাপ্ত আল্লাহ নামক জীবজল কালো। তাই; একে কালা, শ্যাম ও কৃষ্ণ ইত্যাদি বলা হয়। ৮. খালিক্বের (ﺨﺎﻟﻖ) দর্শন পাওয়া যায় না বলে এর কোনো আকার, প্রকার ও রূপের বর্ণনা করা যায় না। পর্যালোচনা (The discussion) হিন্দু মনীষীগণ যেভাবে ব্রহ্মাকে সৃষ্টি করেছেন- অতঃপর; তাদের মন মতো করে ব্রহ্মার বিবাহ দিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী নির্ধারণ করেছেন এবং তাঁর পুত্র ও কন্যা নির্মাণ করেছেন। অতঃপর; মহাদেব কর্তৃক তাঁর একটি মাথা দগ্ধ হওয়ার কথাও লিখেছেন। এতদ্দৃষ্টে মনে হয় রূপকারগণ হয়তো ব্রহ্মার পরিবারের একজন একান্ত সদস্য হবেন বৈকি। তা নাহলে ব্রহ্মারূপ সৃষ্টিকর্তার বিবাহ, সন্তান সংখ্যা, মস্তকদগ্ধ হওয়া, তাঁর রাগ, তাঁর অপারগতা স্বচক্ষে দেখলেন কিভাবে? কেউ উত্তর দিতে পারেন- রূপকারগণ দৈববাণী যোগে বা দিব্যদৃষ্টি দ্বারা এসব এমন সংবাদাদি লাভ করার পরই কেবল এসব সংবাদ লিপিবদ্ধ করার প্রয়াস পেয়েছেন। এসব উত্তরের প্রতিবাদে বলা যায়; আজ হতে প্রায় চার হাজার (৪,০০০) বছর পূর্বে নির্মিত মহাগ্রন্থ বেদ, প্রায় তেত্রিশশত (৩,৩০০) বছর পূর্বে নির্মিত রামায়ণ এবং প্রায় বত্রিশশত (৩,২০০) বছর পূর্বে নির্মিত মহাভারত ও পুরাণগুলো। তখনকার মনীষীগণের দিব্যদৃষ্টি এতই প্রখর ছিল যে তাঁরা দেবতাগণের সৃষ্টি বিবাহ, সন্তান-সন্ততি ও কার্যকলাপ সব দেখতে পেতেন, এমনকি; দিব্যচক্ষে দেখে দেখেই এমন অতি উচ্চ পর্যায়ের মহা গ্রন্থাদি পর্যন্ত লেখতে পারতেন। অথচ; সে যুগে ছিল না তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো দর্শন, ছিল না কোনো বিজ্ঞান, ছিল না উল্লেখযোগ্য তেমন জ্যোতির্বিদ্যা ও ছিল না অধুনাকালের মতো কোনো প্রযুক্তি। পক্ষান্তরে; এখন দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা, বিজ্ঞান ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তি সব আছে, তবুও; তেমন পুস্তক-পুস্তিকা কেউ নির্মাণ করতে পারছেন না কেন? এবার হয়তো উত্তর দিতে পারেন- সে যুগের পারম্পরিকগণ সাধনবলে দিব্যদৃষ্টি অর্জন করতে পারতেন কিন্তু এ যুগের সাধকরা কোনো ক্রমেই দিব্যদৃষ্টি অর্জন করতে সক্ষম হন না। এজন্য; তারা স্বর্গীয় দেবতা ও সৃষ্টিকর্তাগণের সৃষ্টিরহস্য দিব্যদৃষ্টি বলে দেখতে পান না। যারফলে; তারা তেমন মহা পুস্তক-পুস্তিকা প্রণয়ন বা নির্মাণ করতে পারেন না। আমরা বলতে চাই যে কোনো বিষয়ের মূল ঘটনাবলী না জেনে, অনন্ত প্রশ্ন ও উত্তর দ্বারাও সমাধান করা যায় না। এসব সমস্যা সমাধানের জন্য সর্বাগ্রে মানুষের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’ ও রূপক ঘটনাবলীর মূল উদ্ঘাটনের প্রতি মনোনিবেশ করাই সমীচিন হবে। প্রকৃত ব্যাপার হলো; যেমন; পূর্বযুগের সিদ্ধপুরুষ ও মহাপুরুষগণও দিব্যদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ছিলেন; তেমনই; এযুগের সিদ্ধপুরুষ ও মহাপুরুষগণও দিব্যদৃষ্টিসম্পন্ন; এতে কোনো সন্দেহ নেই। যারফলে; তখন যেমন; তাঁরাও দিব্যদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে মহাগ্রন্থ প্রণয়ন করেন নি; তেমনই; বর্তমান যুগের মহাপুরুষ ও সিদ্ধপুরুষগণও দিব্যদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টির দ্বারা মহাগ্রন্থ প্রণয়ন করেন না। যেমন; পুর্বযুগের মনীষীগণেরও দির্বদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি ছিল; তেমনই; বর্তমানযুগের মনীষীগণেরও দিব্যদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে। মনীষীগণের দিব্যদৃষ্টি বা অন্তর্দৃষ্টির কোনো পরিবর্তন হয় নি। পরিবর্তন হয়েছে কেবল মরমীবাদের চর্চা ও অনুশীলন। পূর্বযুগে দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও বিজ্ঞানের তেমন চর্চা ও অনুশীলন ছিল না। এজন্য; তখন মানুষ কেবল পুরাণটির অধিক অধিক চর্চা ও অনুশীলন করতো। কিন্তু বর্তমানে দর্শন, জ্যোতির্বিদ্যা ও বিজ্ঞানের ব্যাপক চর্চা ও অনুশীলনের ফলে পুরাণটির চর্চা ও অনুশীলন একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। যতটুকু চর্চা ও অনুশীলন হয় তাও করে একেবারে মূর্খ ও অজ্ঞ লোকেরা। যারফলে; পূর্বকালের মতো মনীষীগণের উদ্ভবও হচ্ছে না এবং পূর্বকালের মতো মহাগ্রন্থ ও মহা গ্রন্থিকাও আর নির্মিত বা নির্মিত হচ্ছে না। এবার বলা যায় যে সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাগুলো মহাগ্রন্থ প্রণয়নকারী মহান মনীষীগণের মনের মাধুরীতে নির্মিত ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’তে বর্ণিত বিশিষ্ট ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা’। কেউ শ্বাস প্রশ্বাস যোগে চলাচলকারী প্রাণবায়ুকে স্রষ্টা ধারণা করে, কেউবা জীবের জীবাত্মা বিদ্যুৎকে স্রষ্টা চিন্তা করে, কেউবা পুরুষদেহের শুক্রকে স্রষ্টা ধরে, কেউবা শিশ্নকে স্রষ্টা ধরে, কেউবা শ্বেতবর্ণের অমৃত মানব জলকে স্রষ্টা ধরে, আবার কেউবা কৃষ্ণবর্ণের মানব জলকে স্রষ্টা ধরে; বিশাল আয়তনের মহাগ্রন্থ নির্মাণ বা প্রণয়ন করেছেন। শ্বাস, শুক্র, সুধা, মধু, জীবাত্মা ও পরমাত্মা ইত্যাদিই বিভিন্ন মতবাদের মহা পুস্তক-পুস্তিকায় স্রষ্টা রূপে দেখতে পাওয়া যায়। আত্মজ্ঞানী, দার্শনিক ও মরমীগণ যুক্তি পাল্টা যুক্তি দ্বারা নিরাকার স্রষ্টার মতবাদগুলো খণ্ডণ করে মহা গ্রন্থাদির মধ্যে বর্ণিত স্রষ্টার অস্তিত্ব একমাত্র মানবদেহের মধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। আত্মদর্শনের বাইরের কোনো সত্তাকে আত্মজ্ঞানী দার্শনিক ও মরমী মনীষীগণ কখনও স্রষ্টা বলে গ্রহণ করেন নি। এমনকি; আত্মদর্শনের বাইরের কোনো সত্তাকে তাঁরা স্রষ্টা বলে গ্রহণ করতে কখনই সম্মত নন। আবার দার্শনিক ও বস্তু বিজ্ঞানীগণ কখনই সাম্প্রদায়িক স্রষ্টগুলোর অস্তিত্ব স্বীকার করেন না। এজন্য; আত্মজ্ঞানী দার্শনিক ও মরমীবাদীগণের- “আত্মদর্শনের বাইরে কোনো স্রষ্টার অস্তিত্ব নেই” এ মতবাদটি ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। বাস্তবেও তা-ই দেখা যায়। বিশ্বের সব ধর্মগ্রন্থে সাম্প্রদায়িক স্রষ্টগুলোর উক্তিতেই বর্ণিত আছে যে “আমরা তোমাদের মধ্যেই অবস্থান করি, “ نَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ” উচ্চারণ; “নাহনু আক্বরাবু ইলাইহি মিন হাবলিল ওয়ারিদ” অর্থ; “আমরা মোটাশিরা হতেও আরও নিকটবর্তী” (কুরয়ান, ক্বাফ- ১৬)। আবার বলা হয়েছে- “وَفِي أَنفُسِكُمْ أَفَلَا تُبْصِرُونَ” উচ্চারণ; “ওয়া ফি আনফুছিকুম আফালা তুবসিরুন” অর্থ; “তোমাদের মধ্যেই অবস্থিত কিন্তু তোমরা দেখ না।”- (কুরয়ান, জারিয়াত- ২১)। আবার ফারর্সি মরমীবাণীর মধ্যেও দেখতে পাওয়া যায়- “মান্না গুঞ্জুম দর জমিন আসমা, লেকে গুঞ্জুম দর কুলুবি মু’মিনা।” অর্থ; “পৃথিবী ও আকাশের কোথাও আমি থাকি না বরং আমি থাকি বিশ্বাসীদের হৃদয়ে।” এমন শতশত প্রমাণ রয়েছে যে সাম্প্রদায়িক স্রষ্টগুলো আত্মদর্শনের বাইরের কোনো সত্তা নয় এবং সাম্প্রদায়িক স্রষ্টগুলো মানবদেহ ব্যতীত বাইরে কোথাও অবস্থানও করেন না। তবুও; সাম্প্রদায়িকরা যুগের পর যুগ ও শতাব্দীর পর শতাব্দী সাধারণ মানুষকে স্রষ্টা নিরাকার, স্রষ্টা আকাশে থাকেন, স্রষ্টা স্বর্গে থাকেন, স্রষ্টা সাত আকাশের ওপরে অবস্থান করেন, প্রয়াণের পূর্বে স্রষ্টার দর্শনলাভ করা সম্ভব নয় এমন বিভ্রান্তিকর মতবাদগুলো প্রচার প্রসার করে আসছেন। সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা যে দেহের বাইরে কোথাও অবস্থান করেন, প্রয়াণের পূর্বে তাদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার দর্শন পাওয়া যায় না এমন কোনো প্রমাণ দিতে পারবেন কী তারা? তবুও; মানুষকে অন্ধবিশ্বাসী রূপে গড়ে তুলে তাদের শাসন ও শোষণের জন্য তারা তাদের কথা বলেই চলেছেন। এজন্য; সাধারণ মানুষ সাম্প্রদায়িকদের শাসন ও শোষণের অন্ধবিশ্বাসের মরণবিতংস হতে বের হয়ে আসতে পারছেন না। হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা ব্রহ্মা। হিন্দুদের রূপক বর্ণনা মতে; ব্রহ্মার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা সবই রয়েছে। অন্যদিকে, মুসলমানদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা আল্লাহ (ﺍَﻟﻟًّﻪُ) মানুষের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেয়ে বেড়ান, একবার মুহাম্মদ রূপে নিজকে আত্মপ্রকাশ করেন, একবার কুকুর রূপে আত্মপ্রকাশ করেন (কুকুর রূপে মুসার বাড়িতে গিয়ে বসে ছিলেন)। আবার তাঁর বাড়িতে মানুষকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গিয়ে আলাপ করেন (মি’রাজ)। চমৎকার- ১ (Marvelous- 1) একবার কথার ছলে মুসা বলেছিলেন- “আমি অতিথি ভিন্ন একবেলাও আহার করব না।” এ প্রতীজ্ঞার পর হতে প্রতি সন্ধ্যায় অতিথিসহ আহার করা আরম্ভ করলেন। দৈবাৎ একদিন দুপুরে আহার করার জন্য তিনি একজন অতিথি অন্বেষণ করতে লাগলেন। বেলা অদৃশ্য হওয়ার উপক্রম হলেও কোনো অতিথির সন্ধান পেলেন না তিনি। নিরুপায় হয়েই তিনি সন্ধ্যালগ্নে মধ্যাহ্ন ভোজন শেষ করলেন। আহার করতে বসে তিনি একটি কুকুর দেখতে পেলেন। কিন্তু কুকুরটিকে কোনো খাবার দিলেন না। অতঃপর; রাত্রে আবার আল্লাহর সাথে আলোচনায় বসলেন। আল্লাহ বললেন; “মুসা তুমি তোমার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেছ।” মুসা বললেন; “না আমি কখনই আঙ্গীকার ভঙ্গ করি নি বরং দুপুরের আহারের জন্য আমি সন্ধ্যা পর্যন্ত অতিথির অধীর অপেক্ষা করেছি। অবশেষে অতিথির কোনো সন্ধান না পেয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় আমি অন্ন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছি।” মুসার এমন বর্ণনা শ্রবণে আল্লাহ বললেন; “হে মুসা তুমি যখন আহার গ্রহণ করো তখন তোমার সম্মুখে একটি কুকুর দেখতে পাও নি কি?” উত্তরে মুসা বললেন; “হ্যাঁ” তখন আল্লাহ বললেন; “হে মুসা আমি কুকুর রূপেই তোমার নিকটে অতিথি রূপে আত্মপ্রকাশ করেছিলাম।” চমৎকার- ২ (Marvelous- 2) ইসলামী পুরাণ অনুসারে; দূত রূপে জিব্রাইল সব নবী ও রাসুলদের নিকট ওহি নিয়ে যাতায়াত করে থাকেন। একবার জিব্রাইল রাসুলের নিকট ওহি নিয়ে উপস্থিত হলেন। রাসুল বললেন; “ভাই জিব্রাইল! তুমি যার নিকট হতে ওহি আনয়ন করো, তাঁকে কী তুমি দেখেছ?” তিনি বললেন; “না।” তখন রাসুল বললেন; “এবার গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করে সত্যতা যাচাই করেই বাণী নিয়ে এসো!” জিব্রাইল গিয়ে আল্লাহর স্বরূপদর্শন কামনা করলেন। এদত শ্রবণে আল্লাহ বললেন; “আজ গোধুলি লগ্নে জীবননদীর তীরে হাঁটতে থাকবে বিপরীত দিক হতে যাকে আসতে দেখবে তিনিই তোমার আল্লাহ। জিব্রাইল তাঁর কথা মতো জীবননদীর তীর ধরে হাঁটতে আরম্ভ করলেন। ঠিক গোধুলিলগ্নে দেখতে পেলেন দূর হতে একজন লোক তাঁর দিকে এগিয়ে আসছেন। তিনি গভীর আগ্রহের সাথে অপলক নয়নে সামনের দিকে হাঁটতে থাকলেন। নিকটে গিয়ে দেখলেন তিনি রাসুল। সম্বোধন ও করমর্দন শেষে তিনি আরও সামনের দিকে হাঁটতে থাকলেন। আর কারো দেখা না পেয়ে তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন জীবননদীর তীরে যাঁকে দেখলাম তিনি তো রাসুল, আল্লাহর দেখা তো পেলাম না। তিনি দেখা করবেন বললেন কিন্তু দেখা করলেন না। তিনি তো মিথ্যাও বলেন না! তবে ব্যাপারটা কি? অবশেষে রাত্রির অন্ধকার নেমে আসা পর্যন্ত হেঁটেও আর কারো দেখা না পেয়ে তিনি পৃথিবীতে রাসুলের নিকট আগমন করলেন। সম্বোধন ও করমর্দন শেষে রাসুল জিব্রাইলকে জিজ্ঞেস করলেন; “দাদা তুমি আল্লাহকে দেখে এসেছ?” জিব্রাইল অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবতে লাগলেন। আমরা দেবতা চোখের পলকে সত্তর হাজার ক্রোশ পথ অতিক্রম করতে পারি কিন্তু মানুষ তো তা পারেন না। আমি তাঁকে স্বর্গের জীবননদীর তীরে হাঁটতে দেখে এলাম অথচ এত তাড়াতাড়ি এবং আমার পূর্বেই রাসুল পৃথিবীতে এলেন কিভাবে? বলনের চোখে মুখে আশ্চর্যের চিহ্ন দেখে রাসুল বললেন; “ঘাবড়িও না দাদা তুমি যা দেখেছ তা ঠিক দেখেছ।” সাম্প্রদায়িক পৌরাণিক কাহিনী, সাম্প্রদায়িক ইতিহাস ও সাম্প্রদায়িক উপন্যাসগুলোর মধ্যে এমন অসংখ্য ঘটনার বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়। কোনো ঘটনায় সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাকে মাছ আকারে, কোথাও কুকুর আকারে, কোথাও গাছ আকারে, কোথাও পাখি আকারে, কোথাও নারী আকারে, কোথাও শিশু আকারে, কোথাও পুরুষ আকারে, কোথাও ডিম্ব আকারে ও কোথাও আগুন আকারে উপস্থাপনা করতে দেখা যায়। সাম্প্রদায়িক পৌরাণিক কাহিনীর রূপকারগণ কেউ কেউ স্রষ্টার মুখ, চোখ, হাত, পা, আসন, বসন, আহার, বিহার, নারীকণ্ঠ বা নরকণ্ঠের বর্ণনা করতে পর্যন্ত ছাড় দেন নি। এজন্য; বলা যায়- রূপকারগণ বোধহয় স্রষ্টার পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ একজন সদস্য। হয়তো তারা দীর্ঘদিন স্রষ্টার সাথে ওঠাবসা, চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া ও তাঁর সাথে আলাপ আলোচনা করতেও পর্যন্ত ব্যর্থ হন নি। তা না হলে তাঁরা স্রষ্টা সম্পর্কে এত নিখুঁত বর্ণনগুলো উপস্থাপন করতে সক্ষম হলেন কিভাবে? হিন্দুদের স্রষ্টা ব্রহ্মা ব্যাপারে বর্ণিত রয়েছে যে একবার মহাদেব রাগান্বিত হয়ে ব্রহ্মাকে মেরে, তাঁর একটি মস্তক পর্যন্ত গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। পূর্বে ব্রহ্মার পাঁচটি মাথা ছিল। মহাদেব কর্তৃক ব্রহ্মার একটি মাথা ধ্বংস হওয়ার পর বর্তমানে তিনি চারটি মাথা নিয়ে বেঁচে রয়েছেন। সেজন্য; আগে ব্রহ্মাকে পঞ্চানন বলা হতো কিন্তু বর্তমানে তাঁকে চতুরানন বলা হয়। অন্যদিকে; মহাদেবের পাঁচটি মাথা পূর্বেও ছিল এবং এখনও রয়েছে। তাই; মহাদেবকে পঞ্চানন বলা হয়। বর্তমানে ব্রহ্মার চেয়ে মহাদেবের একটি মাথা অধিক রয়েছে। কুরয়ানে বর্ণিত মুহাম্মদ ঊর্ধ্বগমনে গেলে স্বয়ং কুরয়ানে বর্ণিত স্রষ্টা আল্লাহ সত্তর হাজার পর্দার আড়ালে অবস্থান গ্রহণ করেন। হয়তো ভয়, নয়তো লজ্জা, নয়তো নিগূঢ় কোনো কারণেই তিনি অত্যন্ত আপনজনকে কাছে পেয়েও তাঁর সঙ্গে পর্দাহীনভাবে দেখা করতে পারেন নি। কুরয়ানে বর্ণিত মুসাও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে উষ্মপর্বতে গেলে সেখানেও কুরয়ানে বর্ণিত স্রষ্টা তাঁর সঙ্গে সরাসরি দেখা করতে পারেন নি। এসব আলোচনা হতে পরিস্কারভাবে বুঝা যায়, সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার পুরো বর্ণনাটিই রূপকার বা গ্রন্থকারগণের মনের মাধুরিতে আঁকা নিছক কাব্যিক চরিত্রমাত্র। যেভাবে ঔপন্যাসিকগণ উপন্যাস নির্মাণ করেন; তেমনিভাবেই, রূপকারগণও সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, যম, আদিমানব, আদিমানবী, বসিধ, সাংবাদিক, দেবতা, স্বর্গ ও নরক এসব নির্মাণ করেছেন। এজন্য; বলা যায়; সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা কখনই জাগতিক স্রষ্টা হতে পারে না। কারণ; একেক মতবাদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার বর্ণনা একেক প্রকার। অন্যদিকে; জাগতিক স্রষ্টা বা প্রকৃত স্রষ্টার বর্ণনা অনেকে জানেনও না। এজন্য; তাঁর বর্ণনা তাঁরা করতেও এগিয়ে আসেন নি। মোটকথা সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা অন্ধবিশ্বাসের অন্ধকার চাদরে চিরদিনের জন্যই চিরাবৃত। মৃত্যুর পূর্বে কোনো সাম্প্রদায়িকই তাঁর সন্ধান পান না। যা মনে মনে নির্মাণ করা হয় তা তো মনেই থাকে। যার কোনো বাস্তবতা নেই তা পাওয়া যাবেইবা কিভাবে? বিভিন্ন মতবাদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাগুলো নির্মাণের মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কারণ; সব রূপকারের চিন্তাভাবনা এক নয়। যে রূপকার যেভাবে চিন্তাভাবনা করেন, তাঁর সৃষ্টিকর্তাও ঠিক সেভাবেই গড়ে ওঠে। কোনো রূপকার শক্তিকে সৃষ্টিকর্তা ধরে নিয়ে তাঁর রূপক বর্ণনা করেন, আবার কোনো রূপকার প্রকৃতিকে সৃষ্টিকর্তা ধরে নিয়ে তাঁর রূপক বর্ণনা করেন, আবার কোনো রূপকার মনগড়া নিরাকার-সত্তাকে সৃষ্টিকর্তা ধরে নিয়ে তাঁর রূপক বর্ণনা করেন। এজন্য; বিভিন্ন সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক সৃষ্টিকর্তার বর্ণনা ভিন্ন ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক। ইঞ্জিলী রূপকার মনীষীদের নির্মিত রূপক লর্ডের রূপক বর্ণনা ও ক্রিয়েটরের মধ্যে অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। নিচে লর্ড ও ক্রিয়েটরের পার্থক্য তুলে ধরা হলো।
লর্ড ও ক্রিয়েটর এর পার্থক্য (Difference between Lord and Creator) লোর্ড (Lord) ক্রিয়েটর (Creator) ১. খ্রিস্টানদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টাকে ইংরেজি ভাষায় Lord বলে। ১. জাগতিক স্রষ্টাকে ইংরেজি ভাষায় Creator বলে। ২. কেবল জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে Lord বলা হয়। ২. বিশ্বজগতের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তাকে Creator বলা হয়। ৩. Lord কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. Creator সারা সৃষ্টিকুলের সর্বত্র বিরাজিত। ৪. সাধন ও ভজনের দ্বারা Lord এর দর্শনলাভ করে Lordship, Mastership, ‘مسترشيب’ (মুস্তারাশিব), উপাধি লাভ করা যায়। ৪. সাধন-ভজনের দ্বারা ক্রিয়েটরের দর্শনলাভ করা যায় না। এজন্য; ক্রিয়েটর সম্পর্কের কোনো উপাধিও লাভ করা যায় না। ৫. শ্বরবিজ্ঞানে জীবের প্রজনন ও উদ্ভিদের অঙ্কুর উদ্গম শক্তি বহনকারী মধু, শুক্র ও সুধা রসকে লর্ড বলা হয়। ৫. সর্ব সৃষ্টির স্থিতি ও রূপান্তরকারী শক্তিকে ইংরেজি ভাষায় Creator বলা হয়। ৬. Lord নামক সত্তাটি Creator এর সৃষ্টি। ৬. Creator বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ৭. Lord জীবের উত্তমাঙ্গ ও অধমাঙ্গ নামক আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকারী। ৭. ক্রিয়েটর মাথার ওপরে অবস্থিত আকাশ ও পায়ের নিচে অবস্থিত পৃথিবী এবং বিশ্বের সবকিছুর সৃষ্টিকারী। ৮. মানবদেহে প্রাপ্ত Lord নামক জীবজলটি দেখতে কালো। এজন্য; একে কাঁই, কালা, কেলে, শ্যাম, কালিয়া ও কৃষ্ণ ইত্যাদি বলা হয়। ৮. Creator এর দর্শন পাওয়া যায় না বলে এর কোনো আকার, প্রকার ও রূপের বর্ণনা করা যায় না। ভারতীয়, মিশরীয়, গ্রিক ও আরবীয় পুরাণ নির্মাণকারী সুমহান রূপকারগণ কর্তৃক নির্মিত পুরাণ অধ্যায়ন করলে এবং সাম্প্রদায়িক মনীষীদের আলোচনগুলো শ্রবণ করলে জাগতিক স্রষ্টা ও পারম্পরিক স্রষ্টার মধ্যেও অনেক পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। স্রষ্টার সত্তা নিয়ে এমন বহুবিধও সমস্যার কারণেই বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্রমে ক্রমে সৃষ্টি হচ্ছে দলাদলি ও স্ব-ভাগাভাগি। সাথে সাথেই সৃষ্টি হচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা, উগ্রবাদ ও আতঙ্কবাদসহ জাতিগত সহিংসতা। নিচে জাগতিক স্রষ্টা ও পারম্পরিক স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্যগুলো তুলে ধরা হলো। জাগতিক-স্রষ্টা ও পারম্পরিক-স্রষ্টার মধ্যে পার্থক্য (Difference between mundane creator and sequential creator) জাগতিক-স্রষ্টা পারম্পরিক-স্রষ্টা ১. সারা জগতের সৃষ্টিকর্তাকে জাগতিক-স্রষ্টা বলে। যেমন; শক্তি। ১. শুধু জীবকুলের সৃষ্টিকর্তাকে পারম্পরিক-স্রষ্টা বলে। যেমন; শুক্র। ২. জাগতিক স্রষ্টা সৃষ্টিজতের সর্বত্র বিরাজিত। ২. পারম্পরিক স্রষ্টা কেবল জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। ৩. একে সৃষ্টি ও ধ্বংস করা যায় না। ৩. একে সৃষ্টি ও ধ্বংস করা যায়। যেমন; ধান ও ডিম সিদ্ধ করে ভ্রূণশক্তি বিনষ্ট করা যায়। ৪. এর আকার, আকৃতি, রূপ ও বর্ণ কিছুই নেই। ৪. এর আকার, আকৃতি, রূপ ও বর্ণ সবই আছে। ৫. দর্শনশাস্ত্র, জ্যোতিষশাস্ত্র, বিজ্ঞান, মরমী ও আধ্যাত্মিক পুস্তক-পুস্তিকায় এর কোনো বর্ণনা ও বিবরণ পাওয়া যায় না। ৫. বিজ্ঞান, দার্শনিক, মরমী ও আধ্যাত্মিক পুস্তক-পুস্তিকায় এর ব্যাপক বর্ণনা ও বিবরণ পাওয়া যায়। ৬. কেবল অন্ধবিশ্বাস ব্যতীত এর সুনির্দিষ্ট পরিচয় ও সাধনভজন কিছুই নেই। ৬. এর সুনির্দিষ্ট পরিচয় ও সাধন-ভজন সবকিছুই আছে। ৭. বৈষয়িকসাহিত্যে একে শক্তি, জ্ঞান ও প্রকৃতি ইত্যাদি বলা হয়। ৭. শ্বরবিজ্ঞানে একে কাঁই, ঈশ্বর, ব্রহ্মা, লোর্ড ও আল্লাহ বলা হয়। ৮. এর ইংরেজি অনুবাদ Creator ও আরবি অনুবাদ খালিক্ব (ﺨﺎﻟﻖ)। ৮. এর ইংরেজি অনুবাদ Lord ও আরবি অনুবাদ আল্লাহ (اللَّهُ)। ৩. পারম্পরিক স্রষ্টা (Sequential Creator) পরম্পর বিণ পরপর, ধারানুযায়ী, ক্রমান্বয়ে, অনুক্রমাগত, একের পর অন্য। পরম্পরা (বাপৌরূ)বি ১. গ্রন্থনা, আনুপূর্ব, যথাক্রম, ক্রমান্বয়, অনুক্রম, ধারা, পরম্পর ধারাবাহিকতা ২. Catenary, Catechism, series, sequence, catena, string, concatenation, chain, category, spectrum. ৩. ‘سلسلة’ (সিলসিলা), ‘السلسلة’ (আসসিলসিলা), ‘تسلسل’ (তুসালসিলু), ‘مسلسل’ (মুসালসাল), ‘مسلسلات’ (মুসালসিলাত), ‘سلاسل’ (সালালাল)। (ব্যাপ) আদিকাল হতে গুরু ও শিষ্যের মাধ্যমে যে আধ্যাত্মিক জ্ঞান চলে আসছে। পারম্পরিক বিণ ১. পরবর্তী, অনুবর্তী, অনুক্রমিক, প্রথাসিদ্ধ, প্রয়োগসিদ্ধ; ২. sequent, sequential, traditional, classical, ৩. ‘متتابع’ (মুতাতাবা), ‘متسلسل’ (মুতাসালসাল), ‘تسلسلي’ (তাসালসুলি), ‘متتابعة’ (মুতাতাবায়া), ‘متسلسلة’ (মুতাসালসালা), ‘تقليدي’ (তাক্বলিদি) (ব্যাপ) পরম্পরা জ্ঞানধারী, পরম্পরা বিদ্যায় পারদর্শী, পরম্পরা জ্ঞানের ধারক-বাহক সাধু-মহৎ। পারম্পরিক স্রষ্টার সংজ্ঞা (Definition of sequential Creator) শ্বরবিজ্ঞানে কাঁইকে পারম্পরিক স্রষ্টা বলে। পারম্পরিক স্রষ্টার পরিচয় (Identity of sequential Creator) যে স্রষ্টা সারাজগৎ সৃষ্টি করেছেন আজ পর্যন্ত তার কোনো পরিচয় কেউই আবিষ্কার করতে পারেন নি। কী দার্শনিক কী বৈজ্ঞানিক বা কী জ্যোতির্বিদ কেউই জাগতিক স্রষ্টার সুনির্দিষ্ট কোনো বর্ণনা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। এজন্য; তার কোনো বর্ণনাও পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে; বিভিন্ন মতবাদে যার যার সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার ব্যাপক বর্ণনা পাওয়া যায়। সাম্প্রদায়িক লোকজন তাদের স্বস্ব সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার কিছু না কিছু পরিচয় অবশ্যই জানেন। বিভিন্ন মতবাদের সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার বর্ণনগুলো হতে দেখা যায় এক মতবাদের স্রষ্টার সাথে অন্য মতবাদের স্রষ্টার কোনো মিল নেই। এ হতেই বুঝা যায় সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার সৃষ্টি ও নির্মাণ নিতান্তই সাম্প্রদায়িক মনীষীদের মনগড়া। সাম্প্রদায়িকরাই তাদের প্রয়োজনে স্রষ্টা নির্মাণ করে তার পূজা অর্চনা করার নিয়মাবলী নির্মাণ করেছেন। অন্যদিকে; পারম্পরিক মনীষীগণ জাগতিক স্রষ্টা ও সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা নামক ‘bogus boo’ পরিত্যাগ করে সত্য, সঠিক ও চরম বাস্তবতার নিরীক্ষে স্রষ্টা সমস্যার চিরন্তন সমাধান প্রদান করেছেন। পারম্পরিকদের নির্মিত মতবাদটি সবার আগে সৃষ্টি এবং তা স্বভূমিকা ও স্বকীয়তা নিয়ে সারাবিশ্বের আত্মজ্ঞানী বৈষ্ণব, সহজিয়া, মরমীয়া ও বাউলদের মধ্যে দিব্যমানভাবে আজও টিকে রয়েছে। মরমীকবি ও আত্মজ্ঞানীগণ স্রষ্টা পরিভাষাটির উপরোক্ত তিনটি অভিধার কোনটিই গ্রহণ করেন নি এবং এসব অভিধা দ্বারা পুরাণ নির্মাণ করেন নি। তারা মনে করেন যে তাদের স্রষ্টা চরম বাস্তব এবং তার অস্তিত্ব অবশ্যই রয়েছে। অস্তিত্বহীন কোনো নিরাকার বিষয়বস্তুকে স্রষ্টা বলা ও মেনে নেওয়া বোকামির সর্বনিম্ন স্তর বৈ নয়। যেহেতু; স্রষ্টাকে ধরা ও ছোঁয়া যায় না। সেহেতু স্রষ্টাকে নিয়ে কোনকিছু আলোচনা করাও পরাবিদ্যা বা আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান বা মরমীবাদের বিষয়বস্তু নয়। বিশ্বের সব শ্বরবিজ্ঞানে যার আলোচনা করা হয়েছে বর্তমানেও করা হচ্ছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত করা হবে তিনি হলেন স্বায়ম্ভূ। যার আধ্যাত্মিক নাম বাংলাভাষায় কাঁই, সংস্কৃতভাষায় ব্রহ্মা, আরবিভাষায় আল্লাহ (الله) এবং ইংরেজিভাষায় Lord। রূপকার ও গ্রন্থকারগণ স্বস্ব সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার যতরূপ বর্ণনাই করুণ না কেন সবাই তাঁর আবাস্থল মানবদেহ বলেই উল্লেখ করেছেন। এ হতে আরও বুঝা যায়- রূপকার ও গ্রন্থকারগণ মানবদেহের এমন একটি সত্তাকে স্রষ্টা রূপে বুঝাতে চান যে যাকে সাধনবলে ধরা যায় ও যার সাধন ও ভজন করা যায়। পারম্পরিক স্রষ্টাকে দেখা না গেলে ও ধরা না গেলে- রূপকার ও গ্রন্থকারগণ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কেনইবা এতসব বর্ণনা বা আলোচনা করতে প্রয়াস করবেন? বিশ্বের প্রায় সব পরম্পরা মতবাদে পারম্পরিক স্রষ্টার বসতবাড়ির একটা রূপক বর্ণনাও পাওয়া যায়। যেমন; পবিত্র লালনে বলা হয়েছে- “যেখানে সাঁইয়ের বারামখানা, শুনলে মন চমকে ওঠে, দেখতে যেমন ভুজঙ্গনা” (পবিত্র লালন- ৮২৮/১)। তেমনই পবিত্র কুরয়ানে বলা হয়েছে; “اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ زَيْتُونِةٍ لَا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَنْ يَشَاءُ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ ” উচ্চারণ; “আল্লাহ নূরুছ সামাওয়াতি ওয়াল আরদি, মাসালু নূরীহি কা মিসকাতি ফিহা মিসবাহুন, আল মিসবাহু ফি ঝুজাজাতি, আঝঝুজাজাতু কায়ান্নাহা কাউকাবুন। দুররিউয়্যু ইউক্বাদু মিন শাজারাতিম মুবারাকাতিন ঝাইতুনা। লা শারকিয়াতিউ ওয়া লা গারবিয়া। ইয়াকাদু ঝাইতুহা ইউদিউয়্যু ওয়া লাউ লাম তামসাসহু নার, নূরুন আলা নূর। ইয়াদি আল্লাহু লিনূরীহি মাই ইশাউ ওয়া ইয়াদরিবুল্লাহুল আমসালা লিন্নাছি, ওয়াল্লাহু বিকুল্লি শাইয়িন আলিম” অর্থ; “কাঁই আকাশ ও পৃথিবীর জ্যোতি। যেমন; সে জ্যোতির উদাহরণ একটি বাতিদানের মধ্যে আলোক বর্তিকা। সে আলোক-বর্তিকাটি একটি চিমনির মধ্যে রয়েছে। চিমনিটি দেখতে ঠিক তারকার মতো। যা কল্যাণময় জলপাই গাছের তেল দ্বারা প্রজ্জ্বলিত হয়। তা পূর্বেও নয় আবার পশ্চিমেও নয়। অগ্নিস্পর্শ হওয়া ছাড়াই তা জ্বলে ওঠার চেষ্টা করে। তা যেন জ্যোতির ওপর জ্যোতি। কাঁই তাঁর জ্যোতির দ্বারা যাকে ইচ্ছে পথ প্রদর্শন করেন। কাঁই মানুষের জন্য উপমগুলো নির্মাণ করেন। কাঁই সর্ববিষয়ে সুবিজ্ঞ” (কুরয়ান, নূর- ৩৫)। এসব আলোচনা হতে; ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’গুলোর দেহতাত্ত্বিক ব্যুৎপত্তি উদ্ঘাটন করে দেখা যায় কাঁই, ব্রহ্মা, লোর্ড (Lord) ও আল্লাহ (اللَّهُ) মানবদেহের মূলাধার চক্রেই অবতরণ করেন এবং সেখানেই অবস্থান করেন। বিশিষ্ট সাধকগণ সাধনবলে তাঁর দর্শনলাভ করে কাঁইজি, ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, Lordship, Mastership, ‘مسترشيب’ (মুস্তারাশিব) বা ওলিউল্লাহ (ﻮﻟﻰ ﺍﻟﻟﻪ) উপাধিলাভ করেন। পক্ষান্তরে; জাগতিক স্রষ্টা ও সাম্প্রদায়িক স্রষ্টার কোনো রূপরেখা নেই। তাই; তাঁর অবস্থানও পাওয়া যায় না। এজন্য; তাঁর বর্ণনাও কেউ করতে পারেন না। যাকে দেখা যায় না, যাকে ধরা যায় না, তার বর্ণনাও পাওয়া যায় না। পক্ষান্তরে; পারম্পরিক স্রষ্টাকে ধরা যায়, তাকে দেখা যায়। এজন্য; তাঁর বর্ণনাও পাওয়া যায়। পারম্পরিক স্রষ্টাকে ধরা যায়। এজন্য; বিশ্বের বিভিন্ন পারম্পরিক পুস্তক-পুস্তিকার মধ্যে তাঁকে ধরার জন্য বিভিন্ন প্রকার সাধন পদ্ধতির বর্ণনা করা হয়েছে। স্রষ্টাকে সাধনবলে ধরাই না গেলে- সাম্প্রদায়িক গোত্রে গোত্রে এতসব সাধনপদ্ধতি আবিষ্কার করারইবা কী প্রয়োজন ছিল? তুলনামূলক আলোচনায় এসে বলা যায়- জাগতিক স্রষ্টা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সর্বত্র বিরাজিত এবং তাকে সাধনবলে ধরা ও ছোঁয়া যায় না। এজন্য; কেউ তার বর্ণনাও করেন নি। এমনকি; বিশ্বের কোনো গ্রন্থেই তার বর্ণনা পাওয়া যায় না। তবে; জাগতিক স্রষ্টা সম্পর্কে কোনো কোনো দার্শনিক শুধু এতটুকু বলেছেন যে বিশ্বজগতের স্রষ্টা বলে যদি কিছু থেকেই থাকেন তবে তা অবশ্যই হবে ‘জ্ঞান’। অর্থাৎ; জ্ঞানকেই দার্শনিকগণ স্রষ্টা বলে থাকেন। যেহেতু; জ্ঞান ব্যতীত কিছুই সৃষ্টি করা যায় না। এজন্য; তাঁরা জ্ঞানকেই স্রষ্টা বলে থাকেন। অন্যপক্ষে বিজ্ঞানীগণ বলেন যে “শক্তিই স্রষ্টা।” যেহেতু; সবকিছুরই সর্বশেষরূপ হলো শক্তি। শক্তিই ক্রমান্বয়ে শীতল হয়ে বায়বীয় বা নিরাকার রূপ প্রাপ্ত হয়। অতঃপর; আরও শীতল হয়ে তরল বা সাকাররূপ প্রাপ্ত হয় এবং সর্বশেষে কঠিনরূপলাভ করে। শক্তির ঊর্ধ্বে কিছুই নেই। এজন্য; বিজ্ঞানীগণ শক্তিকেই স্রষ্টা বলে থাকেন। বস্তুবাদী গবেষকগণ একমাত্র প্রকৃতিকেই স্রষ্টা রূপে জানেন ও বুঝেন। তাদের ধারণা হলো প্রকৃতিই জগতের স্রষ্টা এবং প্রকৃতিই জগতের পালনকর্তা। প্রকৃতি নিজেই সবকিছু সৃষ্টি করে ও লালনপালন করে থাকে। এছাড়াও; বস্তুবাদী বিজ্ঞানীগণ ‘প্রমজ্ঞাশচুচাতা’ অর্থাৎ- ১. প্রকৃতি, ২. মন, ৩. জ্ঞান, ৪. শক্তি, ৫. চুম্বক, ৬. চাপ ও ৭. তাপ বা 'NNWEMPT' অর্থাৎ; 1. Nature, 2. Nous, 3. Wisdom, 4. Energy, 5. Magnet, 6. Power, 7. Temperature - এ সপ্ত ভৌতিক স্রষ্টার কথাও স্বীকার করে থাকেন। যেহেতু; জাগতিক স্রষ্টা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য কোনকিছু নয়; সেহেতু; তার ব্যাপারে এর অধিক কিছু বলা সম্ভব নয়। অন্যদিকে; পারম্পরিক স্রষ্টা একমাত্র জীবকুলের মধ্যে বিরাজিত। যদিও সাম্প্রদায়িক স্রষ্টা উদ্ভিদ ও প্রাণী উভয় কুলের মধ্যেই বিরাজিত বলে, সাম্প্রদায়িক মনীষীগণ বড় গলায় প্রচার করে থাকেন। একমাত্র তাঁর সাধন ও ভজন করার জন্যই তাঁকে পুনঃপুন পরিচিত করানো হয়। তবে; বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও মরমী সঙ্গীতগুলোর মধ্যে যে স্রষ্টার পরিচয় পাওয়া যায় তা একমাত্র মানুষের মধ্যে যথাযথভাবে পাওয়া যায়। মানুষের মধ্যেই তাঁকে পাওয়া যায় বলে পারম্পরিক স্রষ্টা একমাত্র মানুষের মধ্যেই যথাযথভাবে বিরাজিত এ কথাও বলা যায়। সুবিজ্ঞ সাধকগণ তাঁকে সাধনবলে উদ্ঘাটন বা আহরণ করতে পারেন। এবার পরিচয় স্বরূপ এও বলা যায় যে জীবের জীবনীশক্তি হতে উদ্ভূত ও জীবের প্রজননশক্তি বহনকারী এক প্রকার মানবজলকে পারম্পরিক স্রষ্টা বলা হয়। পুত্র সন্তানের দাড়ি ও গোঁফ উদ্গমনের পর তার দেহে প্রজননশক্তি প্রবেশ করে থাকে। কন্যা সন্তানের রজ আগমনের পর তার দেহেও এ প্রজননশক্তির উৎপত্তি হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে দাড়ি ও গোঁফ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে রজ আগমনের পূর্বে এ প্রজননশক্তির উৎপত্তি হয় না। এজন্য; দাড়ি ও গোঁফ উদ্গমনের পূর্বে ছেলেদের সঙ্গমের দ্বারা গর্ভে কোনো সন্তান বা ভ্রূণ সৃষ্টি হয় না। তেমনই; রজ আগমনের পূর্বে কিশোরীরা সঙ্গম করলেও গর্ভে কোনো সন্তান সৃষ্টি হয় না। অর্থাৎ; দাড়ি ও গোঁফ ওঠার পূর্বে ছেলেদের ও রজ আগমনের পূর্বে মেয়েদের মধ্যে প্রজননশক্তি সৃষ্টি হয় না। এ প্রজননশক্তি না থাকলে কখনই সন্তান সৃষ্টি হয় না। এজন্য; বলা যায় প্রাণীকুলের মধ্যে প্রজননশক্তি ও উদ্ভিদকুলের মধ্যে অঙ্কুরোদ্গমশক্তির আধাররূপ রসকেই পারম্পরিক স্রষ্টা বলা যায়। উদ্ভিদের ক্ষেত্রে প্রায় সব প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে সবুজবর্ণ তিরোহিত হয়ে সোনালিবর্ণ ধারণের পর তার অঙ্কুরোদ্গমনশক্তির উৎপত্তি হয়। অর্থাৎ; উদ্ভিদের অঙ্কুরোদ্গম শক্তিকেই উদ্ভিদের স্রষ্টা বলা হয়। এজন্য; অধিকাংশ উদ্ভিদের সোনালিবর্ণ ধারণের পূর্বে বা ফল পাকার পূর্বে কাঁচা বীজ বা সবুজবীজ ধারণ করে পরবর্তীকালে তা রোপণ করলে সে বীজে অঙ্কুর গজায় না। অর্থাৎ; বীজের সোনালিবর্ণ ধারণের পূর্বে উদ্ভিদের মধ্যে অঙ্কুরোদ্গম বা পুনরুত্থান বা পুনরুদ্গম শক্তি সৃষ্টি হয় না। এ পুনরুদ্গম শক্তি ভিন্ন উদ্ভিদের সৃষ্টি ও বংশবৃদ্ধি হয় না। পারম্পরিকরা উদ্ভিদের এ শক্তিকেই স্রষ্টা বলে থাকেন। কিন্তু গোঁড়া ও অন্ধবিশ্বাসী সাম্প্রদায়িকরা তাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, যম, স্বর্গ ও নরক কিছুই চেনেন না। এজন্য; তারা অল্পতেই রেগে যান এবং ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। এ না বুঝা হতেই সাম্প্রদায়িকতা ও উগ্র মৌলবাদের উৎপত্তি। উদ্ভিদকুলের অঙ্কুরোদ্গমশক্তি বহণ করে এক প্রকার সুপেয়রস। মৌমাছি এ রস সংগ্রহ করে চাকে সঞ্চয় করলে তাকে মধু বলা হয়। এ মধুর মধ্যেই উদ্ভিদের প্রাণশক্তি বা অঙ্কুরোদ্গমশক্তি নিহিত থাকে। এজন্য; সব চিকিৎসক বলে থাকেন যে মধুর চেয়ে পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাদ্য পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। স্বয়ং স্রষ্টা যার মধ্যে দ্রবিভূত থাকে তার চেয়ে উত্তম আর কিবা হতে পারে? তেমনই প্রাপ্তবয়স্ক নরগণের শুক্রের মধ্যে দ্রবিভূত থাকে স্বয়ং স্রষ্টা। এজন্য; এর চেয়ে পুষ্টিকর ও উপাদেয় খাদ্য পৃথিবীতে আর থাকতে পারে না। তাদৃশ রজস্বলা নারীদের স্বাধিষ্ঠানচক্রে প্রতি মাসেই নির্দিষ্ট সময়ে শ্বেত ও কৃষ্ণ বর্ণের দুই প্রকার জল অবতরণ করে থাকে- যার মধ্যে স্বয়ং স্রষ্টাশক্তি আকারে দ্রবিভূত থাকেন। এ দুটি অমৃতধারাকেই প্রকৃত অমৃতসুধা বা মানবজল বা জীবজল বলা হয়। এছাড়াও; প্রসবোত্তর রমণীদের মধ্যে দুগ্ধ নামক অন্য একটি অমৃতসুধাও অবতরণ করে থাকে। রমণীদের স্ফীতাঙ্গ নিঃসৃত দুগ্ধকেও জীবজল বা মানবজল বলা হয়। মধু, শুক্র ও সুধার মধ্যে স্বয়ং স্রষ্টা শক্তি রূপে দ্রবিভূত থাকে বলে মরমীবাদে এসব জলকে স্রষ্টা বলা হয়। এছাড়াও; অধিকাংশ গবেষকদের ধারণা একমাত্র জল হতেই সবকিছু সৃষ্টি। এজন্য; জলই জীবের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা। অবিশ্বাস্য হলেও চিরন্তন সত্য যে এ ত্রি-জলকে ধারণ, গ্রহণ, সাধন ও ভজনের রূপক বর্ণনাই হলো; বিশ্বের সব ধর্মগ্রন্থ ও মরমী পুস্তক-পুস্তিকা। প্রসঙ্গক্রমে আবারও বলতে হয় স্রষ্টা বর্তমান জীব সৃষ্টিক্রিয়ায় সরাসরি অংশগ্রহণ করেন না এবং তার জীব সৃষ্টিক্রিয়ার অনুঘটক প্রতিনিধি স্বায়ম্ভূ ও নিজে কোনো জীব সৃষ্টি করতে পারেন না। যারফলে; জীবের সৃষ্টিকর্তাকে চেনার অর্থ যার যার আপন পিতাকে চেনা এবং উপাস্য চেনা অর্থ স্বায়ম্ভূর জীব সৃষ্টির অনুঘটক সাঁই ও কাঁইকে চেনা। উপাস্য রূপে পিতা নয়, স্রষ্টাও নয় বরং সাঁই ও কাঁই। স্থূলজ্ঞানী ও সাম্প্রদায়িক সংস্কারের নীতিমালার ধ্বজাধারীগণ নিরাকার স্রষ্টার উপাসনার ধুয়া দিয়ে প্রত্যক্ষ বোকামি করে সাধারণ মানুষকে বিপথগামী করে চিরান্ধকারের পথে ঠেলে দিয়ে আসছে বরাবরই। বিশ্বের কোনো মহাকাব্যে নিরাকার স্রষ্টার উপাসনার ধুয়া দিয়ে অযথা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে বলা হয় নি। মানুষ ক্ষুদ্র পরিসর জীবনে যাকে ধরা যায় ও সাধন ভজন দ্বারা যাকে অর্জন করা যায়; এমন উপাস্য সাঁই ও কাঁইয়ের উপাসনা করেই তো শেষ করতে পারে না। আর যাকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না ও সাধন-ভজন করেও পাওয়া যায় না এমন নিরাকার উপাস্যের উপাসনা মানুষ করবে কোন সময়ে?
৭৮/০১. কাঁই Lord (লোড)/ আল্লাহ (الله) ভূমিকা (Prolegomenon) এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ একটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক সহযোগী মূলক সত্তা’ ‘স্রষ্টা ও মধুচন্দ্রিমা’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক মূলক সত্তা’ ‘সৃষ্টিকর্তা’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ‘কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু ও শস্য’। এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চারিত্রিক পরিভাষা’ ‘আদিত্য, কালা, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা’ ও মাধব১’। এবং এর ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ‘আদি১, নীর, সূর্য, স্বায়ম্ভূ ও হর’। কাঁই (বাপৌরূ)বি কালো ঈশ্বর; কালো বর্ণের প্রভু; Lord (লোড); আল্লাহ (الله); Omnipotence, Omniscience, Omniscient, Almighty; (ব্যাপ) যে জীবনীশক্তি ভিন্ন জীব সৃষ্টি হয় না এবং জীবকুল পরমাত্মার সাথে সংযুক্ত থাকতে পারে না তাকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয়; (পরি) মানবদেহে প্রাপ্ত কালোবর্ণের মধুবৎ মিষ্ট অমৃতজল বিশেষ (Melanin); (মব্য্য) কাঁইকে সংস্কৃতে কৃষ্ণ বলা হয় এবং গ্রিক ভাষায় Christo বলা হয়। আর Christo হতেই যিশুখ্রিস্ট পরিভাষার উৎপত্তি; (শ্ববি) অনন্ত, ঈশ্বর, কালোঈশ্বর, প্রজাপতি, হিরণ্যগর্ভ, বিধাতা, বিবস্বান, বিরিঞ্চি, ব্রহ্মা, স্বায়ম্ভূ, ‘শিং বোঙ্গা’, Lord, আল্লাহ (اَللَّهُ); (আপ্রশ) নির্মাতা, সৃষ্টিকর্তা, জগৎস্রষ্টা, creator, author, খালিক্ব (خَالِقٌ); (রূপ্রশ) কাজলা, কালা, কালিয়া, কালু, কৃষ্ণ, কেলে, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা, Swart, Raven, Blackish, Bigwig, Embryonic, মাসূদ (مَسُوْدٌ); (ইংপ) maker, designer (ইপৌচা) ঈসা (عِيْسَىْ), মাসীহ (مَسِيْحٌ), শাম (شَأْمٌ), শামস (شَمْسٌ), শীশ (شِيْشٌ) (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ও বাংভারতীয় পৌরাণিক ‘সৃষ্টিকর্তা দেবতা’ বিশেষ (সংজ্ঞা) ১. সাধারণত; বাংভারতীয় পুরাণে বর্ণিত সৃষ্টিকর্তাকে বাংলায় ‘কাঁই’ বলা হয় ২. শ্বরবিজ্ঞানে কালো বর্ণের অমৃত মানব জলকে রূপকভাবে ‘কাঁই’ বলা হয়; (বাপৌছ) আদি১, নীর, সূর্য, স্বায়ম্ভূ ও হর; (বাপৌচা) আদিত্য, কালা, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা ও মাধব১; (বাপৌউ) কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু১ ও শস্য; (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা; {সং. কালো + সং. ঈশ্বর)> (কা + ঈ) > কাঈ > কাঁই} কাঁইকোষ (বাপৌরূ)বি বিচি, আঁটি, বড়া, অণ্ডকোষ, আণ্ডাধার, জননকোষ, ফল বা শস্যাদির ক্ষুদ্র আঁটি, testicle, scrotum, বয়জা (আ.ﺑﻴﺿﺎﻦ), খুসিয়া (আ.ﺨﺼﻴﺔ), বিয়াউ (আ.ﻮﻋﺎﺀ), সফন (আ.ﺼﻔﻦ) (শ্ববি) মুষ্ক, অণ্ড, আণ্ডা, ব্রহ্মকোষ, অংকুরোদ্গম শক্তির আধার; (রূপ্রশ) থলে, বস্তা, ছালা, ঝুলি (হি.ﺠﻬﻮﻟﻰ), ঝোলা (হি.ﺠﻬﻮﻻ) (ইপ) মারিয়াম (আ.ﻤﺮﻴﻢ) (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘মুষ্ক’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ ও পুরাণের একজন ‘দেবতা’; (সংজ্ঞা) শিশ্নের অণ্ডথলিকে মুষ্ক বা রূপকভাবে কাঁইকোষ বলা হয়; (বাপৌছ) শিবঝুলি; (বাপৌচা) অণ্ডাল; (বাপৌউ) থলি; (বাপৌমূ) মুষ্ক; {সং. কাঁই + সং. কোষ} কাঁইচারী (বাপৌরূ)বিণ কাঁইজি, কাঁইবিহারী, কাঁইধারী, ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, কাঁই বা সৃষ্টিকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী {সং. কাঁই>} কাঁইজি (বাপৌরূ)বিণ ১. পরমেশ্বর, পরমপতি, বিশ্বেশ্বর, বিশ্বনাথ, বিশ্বপতি, lordship, ‘ﻘﻄﺐ’ (কুতুব) ২. ব্রাহ্মণ, বৈরিঞ্চি, কাঁইচারী, কাঁইবিহারী, কাঁইধারী, ব্রহ্মচারী, কাঁই-দর্শনকারী, কাঁই প্রেমিক, কাঁই-দর্শন প্রত্যাশী, কাঁইতত্ত্ব বিশারদ, lordlike, mastership, ‘أستاذية’ (উস্তাদিয়া), ‘مسترشيب’ (মুস্তারাশিব), ‘سيادة’ (সিয়াদা), ‘لوردية نبل’ (লিওয়ার্দিয়া নাবলা), sovereign, ascendant, dominant, supreme, independent, autonomous. (ব্যাপ) ১ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাঁই-দর্শনকারী সাধক-সাধিকার উপাধি বিশেষ। ২ মরমীবাদের আউল, বাউল, নাড়া, সাঁইজি ও কাঁইজি এ পাঁচটি সাধন স্তরের সর্বশেষ স্তর বিশেষ। ৩ জ্ঞানের নৈরাকার স্তর এবং রসাশ্রয় ও রূপাশ্রয় হতে ‘কাঁইজি’ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি। (বাপ) ব্রাহ্মণ (ইংপ) lordship (ইদে) ‘ولى الله’ (ওয়ালি আল্লাহ), ‘خليفة الله’ (খালিফাতু আল্লাহ), নায়িবে ইলাহি (ﻨﺎﺌﺏ ﺍﻟﻬﻰ) {সং. কাঁই + স. জি} কাঁইধারী (বাপৌরূ)বিণ কাঁইজি, কাঁইচারী, কাঁইবিহারী, ব্রাহ্মণ, বৈরিঞ্চি, ব্রহ্মচারী (ব্যাপ) কাঁই বা সৃষ্টিকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী {সং. কাঁই>} কাঁইবিহারী (বাপৌরূ)বিণ কাঁইজি, কাঁইচারী, কাঁইধারী, ব্রাহ্মণ, বৈরিঞ্চি, ব্রহ্মচারী (ব্যাপ) কাঁই বা সৃষ্টিকর্তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভকারী {সং. কাঁই>} কাঁইরাতি (বাপৌরূ)বি কোজাগর, মধুনিশি, মধুযামিনী, মধুরাতি, আনন্দরাত্রি (ইদে) শবই ক্বদর (ﺸﺑﻰ ﻘﺪﺭ) (ব্যাপ) ১. বসন্তকালের রাত্রি। ২. যে রাতে জীবের সৃষ্টিকর্তা কাঁই দেহধামে অবতরণ করে এবং সাধকগণ তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দর্শনলাভ করে ধন্য হন। কাঁইয়ের সংজ্ঞা (Definition of Lord) শ্বরবিজ্ঞানে জীবদেহে অবতরণ করে নতুন জীব সৃষ্টির অনুঘট দেবতাকে কাঁই বলে। কাঁইয়ের মরমী সংজ্ঞা (Mystical definition of Lord) শ্বরবিজ্ঞানে মানবদেহে প্রাপ্ত কালোবর্ণের অমৃতজলকে সৃষ্টিকর্তা বা কাঁই বলে। কাঁইয়ের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি (Some important quotations of Lord) ১. কাঁই কাঁইরে মজার খাল কেটেছে ভারি কৌশলে, একবিন্দু জল নাইরে খালে, কাপড় ভিজে ঝাঁপ দিলে।” (বলন তত্ত্বাবলী)। ২. কাঁইয়ের বসতবাড়ি নাইরে ভুবনে, গড়িয়া এ নিখিল সংসার, বিরাজ করে কোনখানে।” (বলন তত্ত্বাবলী)। কাঁইয়ের পরিচয় (Identity of Lord) এটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের অধীন একটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ বিশেষ। যৌবনকালে জীবদেহে অবতরণ করে নতুনভাবে জীব সৃষ্টিকারী আদি-দেবতাকে কাঁই বলা হয়। শ্বরবিজ্ঞানে সৃষ্টিকর্তা নামে পরিচিত কাঁইয়ের ২টি রূপ পরিলক্ষিত হয়। প্রথমত (Firstly) যে কোনো ফলবান বৃক্ষের ফলের শাস হওয়ার পর তা পরিপক্ব হওয়ার সময় যে শক্তি ফলের মধ্যে প্রবেশ করলে পরবর্তীকালে বিচিটি অঙ্কুরিত হয় তাকেই কাঁই বলা হয়। যে কোনো ফল কাঁচা কর্তন করলে ও পরবর্তীকালে বপণ করলে তা অঙ্কুরিত হয় না কিন্তু পাকাফল কর্তন করে আবার বপন করলে তা অবশ্যই অঙ্কুরিত হয়। এ হতে বুঝা যায় পাকাফলের মধ্যে অদৃশ্য কোনো একটি শক্তি অবশ্যই প্রবেশ করে। পাকাফলের মধ্যে যে অদৃশ্যশক্তি প্রবেশ করে তা-ই কাঁই-সত্তা। জীবের বেলায়ও ঠিক তাই দেখা যায়। অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো নর বা পুরুষের কাঁচাশুক্র প্রাপ্তবয়স্কা কোনো নারীর গর্ভে নিক্ষেপ করলেও কোনো ভ্রূণের সৃষ্টি হয় না। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক নরের শুক্র যে কোনো প্রাপ্তবয়স্কা নারীর গর্ভে নিক্ষেপ করলেই তা মানবভ্রূণ সঞ্চার করতে পারে। মানবভ্রূণ সঞ্চারকারী এ অদৃশ্য শক্তিকেই কাঁই বলে। ধান সিদ্ধ করলে বা ডিম সিদ্ধ করলে ধান ও ডিম অক্ষত থাকে বটে কিন্তু তার ভিতরের অদৃশ্য জীবনীশক্তি লোপ পায়। ধান ও ডিম সিদ্ধ করার পর যে জীবনীশক্তিটি লোপ পেয়ে থাকে তাকেই কাঁই বলা হয়। যেহেতু; ধান ও ডিম সিদ্ধ করলে কাঁই শক্তিটি লোপ পায়; তাই; সিদ্ধ ধান বপণ করলে তা আর অঙ্কুরিত হয় না। অনুরূপভাবে; সিদ্ধ ডিমে ‘ঊষুম’ বা ‘তা’ দিলেও তা আর ছানায় পরিণত হয় না। প্রথম রূপটি নিয়ে মরমীবাদে তেমন কোনো লেখালেখি বা আলোচনা নেই। দ্বিতীয়ত (Secondly) কিশোরীদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সুগঠিত ও সুঠাম হওয়ার পর যে শক্তিটি প্রবেশ করায় নতুন একটি আন্ত আলোড়নের মাধ্যমে রজস্রাবের সৃষ্টি হয় তাকেই কাঁই বলা হয়। অথবা সম্পূর্ণ সুস্থদেহে যার নির্দেশে প্রতিমাসে রজস্বলা রমণীদের জরায়ু হতে রজধারা নিঃসৃত হয় সে মহাশক্তিকেই কাঁই বলা হয়। এ মহাশক্তিটি যতদিন নারীদেহে আগমন ও প্রত্যাগমন করতে থাকে ততদিনই প্রাপ্তবয়স্কা নারীদের রজধারা চলতে থাকে। উক্ত কাঁইশক্তির আগমন প্রত্যাগমন বন্ধ হয়ে গেলেই তাদের রজ আগমন ধারাও চিরতরে বন্ধ হয়ে যায়। আমরা আরও বলতে পারি একটা নারীদেহে কাঁইরূপ মহাশক্তি প্রবেশ করার পর পরই কেবল প্রতিমাসে রজ আগমন আরম্ভ হয়। রজধারার ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ হলো ‘বসিধ’। তাই; এবার বলা যায় “নারীদেহে কাঁইয়ের আগমনে বসিধের আগমন হয় এবং বসিধের আগমনেই সাঁইয়ের আগমন হয়।” প্রাপ্তবয়স্কা নারীদেহে বসিধ বাহ্যিকভাবে সর্বশেষ দেবতা এবং অদৃশ্যভাবে সাঁই সর্বশেষ স্বর্গীয় অবতার। কাঁই ও সাঁই জীবের আত্মা, মন ও জ্ঞান ইত্যাদি অদৃশ্য-সত্তা বহন করেন। কাঁই জীবের আত্মা, মন ও জ্ঞান ইত্যাদি অদৃশ্য-সত্তা বহন করেন এবং জীবের ভ্রূণ সৃষ্টি করেন কিন্তু সাঁই জীবের আত্মা, মন ও জ্ঞান ইত্যাদি অদৃশ্য-সত্তা বহনও করেন এবং জীবের সদ্য সৃষ্ট ভ্রূণগুলো প্রতিপালনও করে থাকেন। এজন্য; কাঁইকে জীবের সৃষ্টিকর্তা এবং সাঁইকে জীবের পালনকর্তা বলা হয়। মরমীবাদে বসিধের কোনো সাধন ভজন নেই। তবে; বসিধ কেবল সময়ের গুরুত্ব বহন করেন। অন্যদিকে; কাঁইসাধন ও সাঁইসাধন সাধকদের প্রকৃত সাধন। স্মরণীয় বসিধের বর্ণ লাল, সাঁইয়ের বর্ণ সাদা ও কাঁইয়ের বর্ণ কালো। আলোচ্য কাঁইজিকেই সংস্কৃত ভাষায় ব্রহ্মা ও কৃষ্ণ এবং আরবি ভাষায় আল্লাহ (ﺍﻠﻟﻪ) এবং ইংরেজি ভাষায় Lord বলা হয়। সাধনবলে মানবদেহে প্রাপ্ত এ কালো জলের সঙ্গে সাক্ষাৎলাভ করতে পারলেই সাধকগণ কাঁইজি বা ব্রহ্মচারী বা অলিউল্লাহ বা Lordship, Lordlike, উপাধিপ্রাপ্ত হন। সাঁই বা কাঁইয়ের দর্শনলাভকারী সাধকগণ সব সময় জন্মান্তরহীন বা পুনর্জনমহীন বা নিঃসন্তান অবস্থায় জীবনযাপন করেন। অর্থাৎ; তারা সর্বদা অখণ্ড থাকার চেষ্টা করেন। সাঁই ও কাঁই-দর্শনকারী সাধকরা কখনই খণ্ডিত হন না। এমন সাধকগণ খণ্ডিত হলে বা সন্তান রূপে পুনর্জন্মে গেলে তাদের উক্ত সাঁইজি, কাঁইজি ও ব্রহ্মচারী ইত্যাদি উপাধিও চিরদিনের জন্য চির রহিত হয়ে যায়। তারা আর মহাশক্তিশালী মহামানব রূপে থাকেন না বরং তখন তারা আবার সাধারণ জীবে পরিণত হয়ে যান। মরমীগণ বলেন; স্রষ্টা পরিভাষাটির অভিধা হলো জীবকুলের প্রাণশক্তি বহনকারী একপ্রকার জীবজল। জীবকুল বয়সপ্রাপ্ত হলে একটি নির্দিষ্ট সময়ে জীবদেহে এ রসের উৎপত্তি হয়। জীবদেহে এ রসের উৎপত্তি না হলে জীবকোষগুলো প্রাণশক্তি উৎপাদন করার ক্ষমতা প্রাপ্ত হয় না। যেমন; শিশুদের শুক্র বা শিশুকোষ কোনটিতেই ডিম্বকের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিদ্যুৎ ধারণ করা বা বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা নেই। আবার কিশোরীদের ক্ষেত্রেও তাই দেখা যায়। কোনো কিশোরী রজস্বলা হওয়ার পূর্বে যত শুক্রই ধারণ করুক না কেন তা কোনো ভ্রূণ সৃষ্টি করে গর্ভধারণ করতে পারে না। জীবকুল যৌবনকালে বিদ্যুৎ ধারণ ও বিদ্যুৎ উৎপাদনের যে ক্ষমতালাভ করে তাকে জীবের সৃষ্টিশক্তি বলে। এ সৃষ্টিশক্তি বা জীবনীশক্তি যে রসের মধ্যে সঞ্চিত থাকে মরমীকবি বা আত্মজ্ঞানীগণ তাকেই স্রষ্টা বলেন। কিশোরের গোঁফ উদ্গত হলে, কিশোরী রজস্বলা হলে, ধান সোনালিবর্ণ ধারণ করলে, ফল পাকলে তাদের মধ্যে সৃষ্টিশক্তি প্রবেশ করে। কিশোরের গোঁফ ওঠার পূর্বে, কিশোরী রজস্বলা হওয়ার পূর্বে, সবুজধানে ও কাঁচাফলে সৃষ্টিশক্তি থাকে না। এজন্য; কিশোরের বীর্যে, কিশোরীর গর্ভে সন্তান জন্ম হয় না এবং সবুজ ধান বা কাঁচা ফল বপন করলে তা ভ্রূণ সৃষ্টিও করতে পারে না। যারফলে; অঙ্কুরিতও হয় না। আবার যথাযথশক্তি বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে জীবের এ স্বায়ম্ভূ শক্তি বা সৃষ্টি শক্তিকে হত্যাও করা যায়। যেমন; ডিম ও ধান সিদ্ধ করলে ডিম ও ধানের ভিতরে ব্যাপ্ত সৃষ্টিশক্তি মারা যায়। যারফলে; সিদ্ধ ডিমের ছানা ফুটে না এবং সিদ্ধ ধান বপন করলে অঙ্কুরিত হয় না। ডিম বা ধান সিদ্ধ করার পূর্বে যে শক্তি ছিল কিন্তু সিদ্ধ করার পর তা লোপ পেয়েছে সে শক্তিকেই সৃষ্টিশক্তি বা স্বায়ম্ভূ শক্তি বলে। এ সৃষ্টিশক্তি যে রসের মধ্যে সঞ্চিত থাকে তাকেই মরমীগণ স্রষ্টা বলে থাকেন। অর্থাৎ; জীবদেহে সৃষ্টিশক্তি বা স্বায়ম্ভূ শক্তি বহনকারী রসকেই মরমীবাদে সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা বলে। আত্মজ্ঞানীগণের মতে; মানবদেহে কালোবর্ণের এক প্রকার রস এ সৃষ্টিশক্তি বহন করে। একে ধরা যায়, দেখা যায়, ভজন ও ভোজন করা যায়। এজন্য; মরমীগণ এ জীবজল বা জীবাম্বুকে রূপকভাবে কাঁই, ব্রহ্মা, কৃষ্ণ, কাজলা, কালা, কালাচাঁদ, কালাচাঁন, কালিয়া, কালোভ্রমর, কালোমাণিক, কালোশশী, কেলে, কেলেমাণিক, কেলেসোনা, চিকনকালা, বিরিঞ্চি, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা, শ্যামকালিয়া ইত্যাদি নামে নামকরণ করেছেন। এসব নামেই আবহমানকাল হতে বাংলাভাষায় নির্মিত হয়ে আসছে অসংখ্য গীতিকাব্য। যেমন; ১. “চাতক প্রায় অহর্নিশি, চেয়ে থাকে কালোশশী, হব বলে চরণদাসী, তা হয় না কপাল গুণে।” (পবিত্র লালন- ৭৯১/২)। ২. “অনাদির আদি শ্রীকৃষ্ণ নিধি, তার কী আছে কভু গোষ্ঠখেলা, ব্রহ্ম রূপে সে অটলে বসে, লীলাকারী তার অংশকলা। পূর্ণ-চন্দ্র কৃষ্ণ রসিক শিখরে, শক্তির উদয় যার শরীরে, শক্তিতে সৃজন মহাসংকর্ষণ, বেদ আগমে যারে কৃষ্ণ বলে। সত্য স্মরণ বেদ আগমে কয়, চিদানন্দরূপ পূর্ণব্রহ্ম হয়, জন্ম-মৃত্যু যার নাই ভবের পর, তবু তো নয় স্বয়ং নন্দলালা। যে দরবেশের দিলদরিয়া অথাই, অজান খবর সে জানে ভাই, ভজ দরবেশ পাবি উপদেশ, লালন কয় হয় উজ্জ্বল হৃদকমলা।” (পবিত্র লালন- ৫৯৩)। ৩. “কাজলাকালো বন্ধু আমার, আসবি কবে বলরে কাজলা আসবি কবে বল। অনেকদিন গেছিস রে কাজলা আসবি কবে বল, দিবানিশি তোর জন্য মন করে টলমল।” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৪. “কালা আমায় পাগল করেছেরে, ঘরে রই কেমনে।” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৫. “আজ পাশাখেলব রে শ্যাম, ও শ্যাম রে তোমার সনে, একেলা পেয়েছিরে শ্যাম, এ নিধুবনে।” (মরমী গীতিকার রাধারমণ)। ৬. “তোমার লাগিয়ারে সদাই, মন আমার কাঁদে বন্ধুরে, প্রাণবন্ধু কালিয়ারে। হৃদয় নিষ্ঠুর রে বন্ধু, তুই তো কুলনাশা, আসি বলে ফাঁকি দিলিরে বন্ধু, না মিটালি আশা।” (কানাইলাল শীল)। ৭. “রজনী হোসনে অবসান, আজ নিশিতে আসতে পারে, বন্ধু কালাচাঁন।” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৮. “এমন শ্যামল সুন্দর মুখ ওরে, আমি যেদিন হতে হেরি, আমার মনে লয় না, ঘর আর বাড়ি।” (অজ্ঞাত গীতিকার)। ৯. শ্যাম কালিয়ারে কৃষ্ণ কালিয়া, কী সুখে রয়েছে রাধা, দেখে যাও আসিয়া।” (বলন কাঁইজি)। ১০. কোথায় রইলারে শ্যাম কালিয়া, পাগল বানাইয়া আমায় উদাসী করিয়া।” (বলন কাঁইজি)। সমীক্ষা (Experiment) বাংভারতীয় উপমহাদেশ ফর্সা বা সাদাপ্রিয় দেশ। বাংভারতীয় উপমহাদেশের শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সবাই ফর্সা বা সাদা ভালোবাসে। বিশ্বের মধ্যে মাত্র দুয়েকটি কালোপ্রিয় দেশ আছে। সে সব দেশের শিশু, যুবক ও বৃদ্ধ সবাই কালো ভালোবাসে। কিন্তু এ উপমহাদেশের গীতিকার বা মরমী কবিগণ কালো নিয়ে গীতি নির্মাণ করে থাকেন। যদি কালো পরিভাষাটির সত্যসত্যই কোনো গোপন অভিধা না থাকত তবে কালোবর্ণ নিয়ে সবাই লেখত না। যেহেতু; এ উপমহাদেশ ফর্সাপ্রিয়। অতএব; সব গীতিকাব্যগুলো ফর্সা নিয়েই নির্মিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বাস্তবে কেউই ফর্সা নিয়ে কোনো আধ্যাত্মিক গীতি নির্মাণ করেন নি । সবাই কালো, কৃষ্ণ, শ্যাম; অর্থাৎ; কালোবর্ণ নিয়েই গীতি নির্মাণ করেছেন, বর্তমানেও করছেন এবং ভবিষ্যতেও নির্মাণ করবেন। মরমীবাদে বর্ণিত কালো, কালা, কৃষ্ণ, শ্যাম প্রভৃতি পরিভাষা দ্বারা কাঁই বা ব্রহ্মাকে বুঝায় এবং কাঁই বা ব্রহ্মা ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’টির প্রকৃত আভিধানিক শব্দই হলো স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তা। আভিধানিক স্রষ্টাই মরমীবাদে ব্রহ্মা বা কাঁই বা কৃষ্ণ। মরমী সাধকগণ মানবদেহ হতে নিয়মিত সাধন ও অনুশীলনের দ্বারা এ কাঁইয়ের দর্শনলাভ করেই কাঁইজি ও ব্রহ্মার দর্শনলাভ করেই ব্রাহ্মণ বা ব্রহ্মচারী উপাধিলাভ করেন। মরমীগণের মতে; স্রষ্টা বা সৃষ্টিকর্তার প্রত্যক্ষ সাক্ষাৎলাভ করাই সাধনরাজ্যের সর্বশেষ স্তর। তেমনই; আরবীয় শ্বরবিজ্ঞানে আল্লাহর (ﺍﻠﻠﻪ) সাথে প্রত্যক্ষ দর্শনলাভ করাই আব্দালগণের সর্বশেষ স্তর। আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) এর সাথে সাক্ষাৎলাভ করলেই আব্দালগণের উপাধি অলিউল্লাহ (ﻭﻟﻰﺍﻠﻠﻪ) বা সংক্ষেপে অলি (ﻭﻟﻰ) হয়ে যায়। আরবি এ অলি (ﻭﻟﻰ) পরিভাষাটির বহুবচন হলো আউলিয়া (ﺍﻭﻟﻴﺎﺀ)। সাধকের ব্রাহ্মণ বা অলি (ﻭﻟﻰ) হওয়ার পর আর কোনো সাধন ভজন অবশিষ্ট থাকে না। তখন তাঁরা কেউবা গ্রন্থ লিখে কেউবা নীরব থেকে আবার কেউবা গুরু রূপে অবশিষ্ট জীবনকাল অতিবাহিত করে পরপারে যাত্রা করেন। ১. “১যেখানে সাঁইর বারামখানা, শুনলে মন চমকে ওঠে, দেখতে যেমন ভুজঙ্গনা। ২যা ছুঁলে প্রাণে মরি, এ জগতে তাইতে তরি, বুঝে তা বুঝতে নারি, কী করি তার নাই ঠিকানা। ৩আত্মতত্ত্ব যে জেনেছে, দিব্যজ্ঞানী সে হয়েছে, কুবৃক্ষে সুফল পেয়েছে, আমার মনের ঘোর গেল না। ৪যে ধনে উৎপত্তি প্রাণধন, সে ধনের হলো না যতন, অকালে ফল পাকায় লালন, দেখেশুনে জ্ঞান হলো না।” (পবিত্র লালন- ৮২৮)। ২. “يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَخُونُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُوا أَمَانَاتِكُمْ وَأَنْتُمْ تَعْلَمُونَ” “ইয়া আইয়্যুহাল্লাজিনা আমানু লা তাখুনুল্লাহ ওয়ার রাসুল ওয়া তাখুনু আমানাতিকুম ওয়া আনতুম তা’লামুন” অর্থ; “হে বিশ্বাসীগণ তোমরা কাঁই ও সাঁই এর অপচয় করো না এবং তোমরা সঞ্চিত সম্পদের অপচয় করো না, তোমরা জ্ঞাত থাকা অবস্থায়।” (কুরয়ান, আনফাল- ২৭)। O you who believe! Betray not Lord and God, nor betray knowingly your things entrusted to you, if you know। উপরোক্ত উদ্ধৃতি দুটি মরমীগণের স্রষ্টা মানবদেহের সংকর, সাঁই ও কাঁই প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট। জীবের সৃষ্টিকর্তা (Creator of organism) ১. সারাজগতের সৃষ্টিকারীকে সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা বলে। ২. সৃষ্টিক্রিয়ায় সরাসরি অংশ গ্রহণকারীকে সৃষ্টিকর্তা বা স্রষ্টা বলে। পরিশেষ (Conclusion) কাঁই, ব্রহ্মা ও আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) যাই বলি না কেন, এসবের ধ্রুব বাস্তবতা রয়েছে এবং আত্মদর্শনে এ পরিভাষাগুলোর বাস্তব-সত্তাও রয়েছে। এসব অত্যন্ত গুরুত্ববহনকারী ও রহস্যময় পরিভাষা। কাঁই, ব্রহ্মা, আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) ও Lord এসব পরিভাষাকে শুধুই গালগল্প, অর্থহীন, ভিত্তিহীন, বাস্তবতাহীন, সত্তাহীন ও অভিধাহীন বলে উপহাস করা বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের আধ্যাত্মিক দৈন্যতা বৈ নয়। আবার সাম্প্রদায়িকরা কাঁই, ব্রহ্মা ও আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) ইত্যাদি পরিভাষার অভিধা যে নিরাকার মহাশক্তি বলে নির্ধারণ করেছে; তাও একেবারে ভিত্তিহীন। কোনো নিরাকার-সত্তা নিয়ে এত কিছু লেখা বা বলার কোনো অবকাশ নেই। যাকে ধরা যায় না, অনুভব করা যায় না, ছোঁয়া যায় না, দেখা যায় না, ভোজন, ভজন বা পূঁজন করা যায় না তা নিয়ে পুরাণ, মরমীবিজ্ঞান বা মহাবিজ্ঞানে আলোচনা করা একেবারে অযৌক্তিক ও ভিত্তিহীন। কাঁই, ব্রহ্মা ও আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) ইত্যাদির যদি কোনো বাস্তবতা না থাকত তবে মহাবিজ্ঞানী মরমীগণ এত কালি ব্যয় করে এত কাগজ নষ্ট করে এত গ্রন্থাদি নির্মাণ করতেন না। সর্বশেষে বলতে হয় ব্যবধানে অবস্থান করে কোনকিছুই জানা বা বুঝা যায় না। উপরোক্ত ত্রি-ত্ব মত পরিত্যাগ করে একনিষ্ঠভাবে কাঁই, ব্রহ্মা ও আল্লাহ (ﺍﻠﻠﻪ) ইত্যাদি পরিভাষার প্রকৃত-সত্তা উদ্ঘাটন করতে হলে মরমীবিজ্ঞান বা মহাবিজ্ঞান ভালোভাবে পড়া প্রয়োজন। মরমী মহাবিজ্ঞানীগণের নিকট পরিভাষাগুলোর গভীর তত্ত্বভেদ ও রহস্যময়তা একান্তভাবে জানা ও বুঝা উচিত। তা না হলে শুধু বিজ্ঞান ও দর্শন দ্বারা মহাবিজ্ঞান জানা ও বুঝা সম্ভব নয়। যেহেতু; আদি-স্রষ্টাকে ধরা ছোঁয়া যায় না সেহেতু স্রষ্টাকে নিয়ে কোনকিছু আলোচনা করাও পরাবিদ্যা বা আধ্যাত্মিক বিজ্ঞান বা মরমীবাদের বিষয়বস্তু নয়। বিশ্বের সব মরমীবাদে যার আলোচনা করা হয়েছে বর্তমানেও করা হচ্ছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত করা হবে তিনি হলেন স্বয়ম্ভু সত্তা স্বায়ম্ভূব। বাংলাভাষায় আধ্যাত্মিক নাম “কাঁই” সংস্কৃতভাষায় ‘ব্রহ্মা’ আরবি ভাষায় ‘আল্লাহ’, ‘ﺍﻠﻠﻪ’ এবং ইংরেজি ভাষায় Lord. জীবের বর্তমান অবস্থা স্রষ্টা সৃষ্টি করেন না। স্রষ্টা হলেন আদি-সৃষ্টিকর্তা। স্রষ্টার প্রতিনিধি স্বায়ম্ভূ। তিনি সৃষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন মাত্র কিন্তু তিনিও নিজে সৃষ্টি করতে পারেন না। বর্তমানে স্রষ্টা নিজে কোনকিছু সৃষ্টি করেন না। তিনি সবকিছু আদিপর্বে সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতিনিধি স্বায়ম্ভূ তার সদস্যদের নিয়ে সৃষ্টিকার্য পরিচালনা করেন। কিন্তু তিনিও কোনকিছু সৃষ্টি করতে পারেন না। যারফলে; জীবের সৃষ্টিকর্তা বলতে একমাত্র জনককেই বুঝায়। একমাত্র পিতার ইচ্ছেতেই জীব সৃষ্টি হয়। শ্বরবিজ্ঞানে পিতা বলতে পিতা-মাতা উভয়ই বুঝায়। পিতা ইচ্ছে করলে সন্তান সৃষ্টি করতে পারেন আবার নাও পারেন। প্রসঙ্গক্রমে আবারও বলতে হয় স্রষ্টা বর্তমান জীব সৃষ্টিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করেন না এবং তার জীব সৃষ্টিক্রিয়ার অনুঘটক প্রতিনিধি স্বায়ম্ভূও নিজে কোনো জীব সৃষ্টি করতে পারেন না। যারফলে; জীবের সৃষ্টিকর্তাকে চেনার অর্থ যার যার আপন পিতাকে চেনা এবং উপাস্য চেনা অর্থ স্বায়ম্ভূর জীব সৃষ্টির অনুঘটক সাঁই ও কাঁইকে চেনা। উপাস্য রূপে পিতা নয় স্রষ্টাও নয় বরং সাঁই ও কাঁই। স্থূলজ্ঞানী ও সাম্প্রদায়িক সংস্কারের নীতিমালার ধ্বজাধারীগণ নিরাকার স্রষ্টার উপাসনার ধুয়া দিয়ে প্রত্যক্ষ বোকামি করে সাধারণ মানুষকে বিপথগামী করে চিরান্ধকারের পথে ঠেলে দিয়ে আসছে বরাবরই। বিশ্বের কোনো মহাকাব্যে নিরাকার স্রষ্টার উপাসনার ধুয়া দিয়ে অযথা অন্ধকারে ঢিল ছুঁড়তে বলা হয় নি। ক্ষুদ্র পরিসর জীবনে যাকে ধরা যায় এবং যাকে সাধনভজনে পাওয়া যায় এমন উপাস্য সাঁই ও কাঁইয়ের উপাসনা করেই তো শেষ করা যায় না। আর যাকে ধরা যায় না ও যাকে ছোঁয়া যায় না এমন নিরাকার উপাস্যের উপাসনা মানুষ করবে কোন সময়ে? পরিশেষে বলা যায় জীবের সৃষ্টিকর্তা বা সৃজক বলতে জীবের স্বয়ম্ভু সত্তা স্বায়ম্ভূবকে বুঝায়। স্বায়ম্ভূর বাংলা ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক ছদ্মনাম পরিভাষা’ হলো সাঁই। জীবের সৃষ্টিকর্তা স্বায়ম্ভূকেই বাংলাভাষায় রূপকভাবে কাঁই ইংরেজি ভাষায় রূপকভাবে Lord এবং আরবি ভাষায় রূপকভাবে ‘আল্লাহ’ (ﺍﻠﻠﻪ) বলা হয়। নিচে কাঁই পরিভাষাটির গঠন ও তাৎপর্য তুলে ধরা হলো। কাঁই পরিভাষার উৎপত্তি বিশ্লেষণ (Analysis of the origin of the technicality Lord) কালো (বাপৌরূ)বি কৃষ্ণবর্ণ, শ্যামবর্ণ rবিণ কৃষ্ণবর্ণযুক্ত, শ্যামবর্ণবিশিষ্ট (বাপৌরূ) কাঁই (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা। কালো + ঈশ্বর = কাঈ (উভয় পরিভাষার প্রথম বর্ণ গ্রহণ করে)। ‘কাঈ’ পরিভাষাটির দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটির দীর্ঘস্বর পড়তে কষ্ট হয়। এজন্য; পড়ার সুবিধার্থে দীর্ঘই (ঈ) বর্ণটিকে হ্রস্বই (ই) বর্ণ দ্বারা পরিবর্তন করে এবং সে পরিবর্তনের চিহ্নস্বরূপ একটি চন্দ্রবিন্দু “ ঁ ” গ্রহণ করে ‘কাঈ’ পরিভাষাটি “কাঁই” পরিভাষা রূপে সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলা এ ‘কাঁই’ পরিভাষাটি হতেই ‘কাঁইজি’ পরিভাষাটির উৎপত্তি। নিচে ‘কাঁইজি’ পরিভাষাটির উৎপত্তি বিশ্লেষণ করা হলো। কাঁই (বাপৌরূ)বি কাজলা, কালা, কালিয়া, কালু, কৃষ্ণ, কেলে, বিরিঞ্চি, ব্রহ্মা, শ্যাম, শ্যামল, শ্যামলা, Lord, creator, author, maker, designer, ‘ﺍﻠﻠﻪ’ (আল্লাহ), ‘ﺨﺎﻟﻖ’ (খালিক্ব), ‘ﻋﻴﺴﻰٰ’ (ঈসা), ‘ﻤﺴﻴﺢ’ (মসিহ), ‘ﺷﺄﻢ’ (শাম), ‘ﺸﻤﺲ’ (শামস), ‘ﺸﻴﺶ’ (শিশ) (প্রাঅ) নির্মাতা, সৃষ্টিকর্তা, জগৎস্রষ্টা (শ্ববি) অনন্ত, ঈশ্বর, কমলাসন, কালোঈশ্বর, চতুরানন, প্রজাপতি, বিধাতা, বিবস্বান, ব্রহ্মা, স্বায়ম্ভূ, হিরণ্যগর্ভ (মব্য্য) কাঁইশক্তি বা জীবনীশক্তি ভিন্ন জীব সৃষ্টি হয় না বলে কাঁইকে সৃষ্টিকর্তা বলা হয় (দেপ্র) এই পরিভাষাটি ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক চরিত্রায়ন সত্তা সারণী’ এর ‘সৃষ্টিকর্তা’ পরিবারের ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক উপমান পরিভাষা’ ও পুরাণের একজন ‘দেবতা’;। (সংজ্ঞা) ১. যৌবনকালে জীবদেহে অবতরণ করে নতুনভাবে জীব সৃষ্টিকারী আদি কালো রসকে কাঁই বলা হয়। ২. কালোবর্ণের অমৃত মানবজলকে সৃষ্টিকর্তা বা রূপকভাবে কাঁই বলা হয়; (বাপৌছ) আদি১, নীর, সূর্য, স্বায়ম্ভূ ও হর; (বাপৌচা) আদিত্য, কালা, কৃষ্ণ, ব্রহ্মা ও মাধব১; (বাপৌউ) কাঁই, ঘি, পীযূষ, মধু১ ও শস্য; (বাপৌমূ) সৃষ্টিকর্তা; {সং. কালো + সং. ঈশ্বর) > (কা + ঈ) > কাঈ > কাঁই} জি [ﺠﻰ] অব্য নামের পরে ব্যবহৃত সম্বোধনসূচক শব্দ (নানাজি) {তু} আবার বাংলা ‘কাঁই’ এবং তুর্কি ‘জি (ﺠﻰ)’ পরিভাষাদ্বয় একত্রিত হয়ে (কাঁই + জি) এ “কাঁইজি” পরিভাষাটির উৎপত্তি হয়েছে। কাঁইজি (বাপৌরূ)বিণ ১. পরমেশ্বর, পরমপতি, বিশ্বেশ্বর, বিশ্বনাথ, বিশ্বপতি ২. কাঁই-দর্শনলাভকারী, কাঁইপ্রেমিক, কাঁই-দর্শন প্রত্যাশী, কাঁইচারী, কাঁইবিহারী, কাঁইধারী, ব্রাহ্মণ, ব্রহ্মচারী, বৈরিঞ্চি, কাঁইতত্ত্ব বিশারদ, lordship, lordlike, ‘ربوبيته’ (রুবুবিয়াতাহু) (পরি) জ্ঞানের নৈরাকার স্তর এবং রসাশ্রয় ও রূপাশ্রয় হতে ‘কাঁইজি’ সম্প্রদায়ের উৎপত্তি; (ব্যাপ) ১. প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাঁই-দর্শনকারী সাধক-সাধিকার উপাধি বিশেষ। ২. মরমীবাদের আউল, বাউল, নাড়া, সাঁইজি ও কাঁইজি- এ পাঁচটি সাধন স্তরের সর্বশেষ স্তর বিশেষ। (বাপ) ব্রাহ্মণ (ইংপ) lordship (ইদে) ‘ولى الله’ (ওয়ালি আল্লাহ), ‘خليفة الله’ (খালিফাতু আল্লাহ), নায়িবে ইলাহি (ﻨﺎﺌﺏ ﺍﻟﻬﻰ) {সং. কাঁই + স. জি} জীবের সৃষ্টিকর্তা কে কাঁই নাকি সাঁই (Who is the creator of organism Lord or God?) আজ হতে প্রায় দেড়শত বছর পূর্বে মহাত্মা লালন সাঁইজি লিখে গেছেন- “অনন্তরূপ সৃষ্টি করলেন সাঁই, মানবের চেয়ে উত্তম কিছু নাই, দেব-দেবতাগণ করে আরাধন, জনম নিতে এ মানবে।” (পবিত্র লালন- ২২৭/২)। অর্থাৎ; তিনি সাঁইকে সৃষ্টিকর্তা বলে গেছেন। তখন সৃষ্টিকর্তা বুঝানোর জন্য ‘সাঁই’ ব্যতীত অন্য কোনো পরিভাষা ছিল না। যেমন; এখনও ফার্সি ভাষায় সৃষ্টিকর্তা বুঝানোর জন্য কেবল ‘খোদা’ ব্যতীত অন্য কোনো পরিভাষা নেই। তাই; পার্সিয়ানরা এখনও খোদা পরিভাষাটি দ্বারাই ‘সৃষ্টিকর্তা’ ও ‘পালনকর্তা’ উভয়কেই বুঝিয়ে থাকেন। তাদৃশ বাংলা ভাষায় পুরাণ গড়ে না ওঠায় আজও সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, ঐশিদূত ও বর্থ্য প্রমুখের নামকরণ করা হয় নি। অবশেষে গত একবিংশ শতাব্দীর প্রথমদশকে আমরা বাংলা ভাষায় সৃষ্টিকর্তার নামকরণ করেছি ‘কাঁই’ এবং ঐশিদূতের নামকরণ করেছি ‘বসিধ’। এবার পৃথিবীর অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাও সাবলিল হয়েছে। নিচে একটি সারণী তুলে ধরা হলো। ক্র ভাষা সৃষ্টিকর্তা পালনকর্তা ঐশিদূত ১. বাংলা কাঁই সাঁই বসিধ ২. সংস্কৃত ব্রহ্মা বিষ্ণু নারদ ৩. ইংরেজি Lord God Messenger ৪. আরবি আল্লাহ (الله) রাব (رَبٌّ) নাবী (نَبِيٌ) ৫. ফার্সি খোদা (خدا) খোদা (خدا)
পায়গাম্বর (ﭙﻴﻐﻤﺒﺮ)
সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তাকে কখনই এক করা বা এক বলা সমীচীন নয়। কারণ; দু’টো সত্তাই সম্পূর্ণ ভিন্ন। অতীতকালে বাংলা ভাষায় যদিও কেবল ‘সাঁই’ পরিভাষাটির দ্বারা দু’টো সত্তাকেই বুঝানো হতো। উদাহরণত বলা যায় যখন মোবাইল ছিল না তখন মোবাইল ছাড়াই চলেছে। কিন্তু বর্তমানে মোবাইল ছাড়া চলা একেবারেই অসম্ভব। তাদৃশ যখন ‘কাঁই’ পরিভাষা ছিল না তখন উক্ত পরিভাষা ছাড়াই চলেছে। কিন্তু বর্তমানে সাহিত্য, উপন্যাস, গীতি, সারি, নাটক, যাত্রাপালা, কাব্য কিংবা কবিতা লিখতে গেলেই ‘কাঁই’ পরিভাষাটির ব্যবহার অতীব প্রয়োজন। এবার শক্ত করেই বলা যায় ‘কাঁই’ হলেন সৃষ্টিকর্তা, ‘সাঁই’ হলেন পালনকর্তা এবং ‘বসিধ’ হলেন স্বর্গীয় দূত। সাম্প্রদায়িক সৃষ্টিকর্তা নির্মাণপদ্ধতি (Schismatical creator construction method) পুরাণ নির্মাণ এবং ‘বাংভারতীয় পৌরাণিক রূপক পরিভাষা’গুলোর জন্ম-পরিচয় ও জীবনী নির্মাণ একটি যুগান্তকারী শিল্প। এ শিল্পের নাম পুরাণ শিল্প। বর্তমান বিশ্বে যত প্রকার সাম্প্রদায়িক ও পারম্পরিক মতবাদ রয়েছে এবং এসবের অনুকূলে যতগুলো পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে তা সবই এ শিল্পের মাধ্যমেই নির্মিত হয়েছে। বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৪,৩০০টিরও অধিক স্বয়ংসম্পূর্ণ মতবাদ রয়েছে। আবার এসব মতবাদের অনুকূলে প্রায় ৬,০০,০০০ পারম্পরিক মতবাদ রয়েছে। সব মতবাদেরই একটি করে সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা, নগরকর্তা, সংহারকর্তা, আদিমানব, আদিমানবী ও বর্থ্য রয়েছে। এছাড়াও; রয়েছে পাপ, পুণ্য, স্বর্গ ও নরক। অত্যন্ত মজার ব্যাপার হলো এক মতবাদের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, সংহারকর্তা, নগরকর্তা, আদিমানব, আদিমানবী ও বর্থ্য এবং পাপ, পুণ্য, স্বর্গ ও নরক ইত্যাদির সাথে অন্য মতবাদের এসব উপাদানের অবিকল মিল নেই। এর কারণ একেক রূপকার একেকভাবে নিজস্ব মনের রঙতুলি দ্বারা এসব নির্মাণ করেছেন। যেমন; বাংভারতীয় পুরাণ মতে; নির্মিত স্রষ্টা ‘ব্রহ্মা’ ও আরবীয় পুরাণ; নির্মিত স্রষ্টা ‘আল্লাহ’। ব্রহ্মার ঔরসজাত সন্তানাদি নির্মাণ করা না হলেও তাঁর মানসপুত্র ও মানসীকন্যা অনেক নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের আল্লাহর ঔরসজাত কিংবা মানসসন্তান কিছুই নির্মাণ করা হয় নি। ব্রহ্মার ব্যাপারে নির্মাণ করা হয়েছে তিনি বিশ্বজগতের সবকিছুই কেবল মন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু আল্লাহর ব্যাপারে নির্মাণ করা হয়েছে তিনি প্রেমাসক্ত হয়ে নিজের জ্যোতি হতে আংশিক জ্যোতি সর্বপ্রথমে ভিন্ন করেছেন। সে ভিন্ন জ্যোতি হতেই জ্যোতি পৃথকীকরণ প্রযুক্তি দ্বারা এ বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেছেন। এমনই ভাবে একেক মতবাদের সৃষ্টিকর্তার একেক প্রকার বিশ্ব নির্মাণপদ্ধতি ও একেক প্রকার তাদের চরিত্র পাওয়া যায়। বাস্তবে বলতে হয় কোনো রূপকার তো সৃষ্টিকর্তার বাড়ির নিমন্ত্রিত অতিথিও নন কিংবা সৃষ্টিকর্তাও কোনো রূপকারের বাড়ির চা-চক্রের নিমন্ত্রিত অতিথিও নন। তবে; রূপকাররা সৃষ্টিকর্তাগণের সৃষ্টি কার্যাদি হতে আরম্ভ করে তাদের গঠনগাঠন, আসন-বসন, আহার-বিহার, সন্তান-সন্ততি ও প্রেম-রাগ সবকিছুই অবিকল বলে দিলেন কিভাবে? যদি দৈববাণী বা ঐশিবাণী যোগেই এসব বলা হতো তবে সারাবিশ্বের সব বর্ণনা একই হতো। এমন প্রশ্নের উত্তর হলো; এসব কেবলই মরমীবাদের সূত্রাদি দ্বারা এবং পুরাণ শিল্প দ্বারাই নির্মিত। এবার আমরা নতুন একটি স্রষ্টা নির্মাণকার্য আরম্ভ করব। সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখব যাতে করে নয়া স্রষ্টা বিশ্বের অন্যান্য মতবাদের স্রষ্টার সাথে অবিকল মিলে না যায়। আমাদের স্রষ্টার নাম ‘কাঁই’। তিনি সর্বপ্রথম রূপকারগণের দ্বারা সৃষ্টি হয়ে মানুষের দ্বারা পূজিত হতে আরম্ভ করেন। দিব্যদৃষ্টিহীন সাম্প্রদায়িক মনীষীদের দ্বারা জাগতিক উপাস্যের স্তরে উন্নীত হওয়ার পর তিনি ঊর্ধ্বলোকে গমন করেন। সেখান থেকেই তিনি বিশ্বজগৎ প্রসারণ করতে আরম্ভ করেন। ২১ দিনে সারাবিশ্বজগৎ সৃষ্টি করেন। যাবতীয় কার্য কেবল ইঙ্গিতের দ্বারাই তিনি পরিচালনা করে থাকেন। কোনকিছু সৃষ্টি করতে চাইলে তিনি কেবল একটি ইঙ্গিত করেন সঙ্গে সঙ্গেই তা হয়ে যায়। কাঁইয়ের আহার, নিদ্রা, ভয়, চিন্তা, লোভ ও লালসা সবই আছে। কিন্তু তাঁর কোনো জন্ম-মৃত্যু নেই। তিনি অনাদি কিন্তু অনন্ত। তিনি প্রতিমাসে মাত্র একবার পৃথিবী নামক গ্রহটি পরিভ্রমণে আসেন। ঐ দিনক্ষণ জেনে ও বুঝে আত্মতত্ত্বপন্থী সাধক-সাধিকাগণ কাঁইয়ের দর্শনলাভ করে মানবকর্ম সারা করে থাকেন। কাঁইয়ের তিন প্রকার বাহিনী রয়েছে। যথা; শ্বাস, কামরস ও রিরংসা। এভাবেই কাঁইয়ের ব্যাপ্তি হবে সারা বিশ্বে। বলন কাঁইজি (আলাপ) ১৩:৪৩, ১৩ জুলাই ২০২৪ (ইউটিসি)